তোমরা অনেকেই ভূতে ভয় পাও, ভাবো কিভাবে তাড়ানো যায় কিন্তু মনোজের বাবা সেটি ঠিকমতোই এই গল্পে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সে অনেক কাল আগের কথা। সে সময় মনোজদের বাড়িতে প্রচন্ড হই হট্টগোল হত। মনোজ ও তার ভাই ও দিদি সকালে স্কুল যেত।
মনোজ তখন ভয়ে কাঁপা শুরু করেছিল, বাবা জেনে ফেলেছেন যখন আর বাঁচার উপায় নেই। তুমি বুঝতেই পারছ তার কী অবস্থা হয়েছিল।
তা একদিন মনোজ করেছে কী, জামা প্যান্ট ছিঁড়ে বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। মা দেখেই বিছানা থেকে নেমে দুই গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় কষিয়ে বললেন,"এই হাল করে এসেছ তুমি স্কুল থেকে? রোজ বাঁদরামি!", বলে আবার দুটো চড় মেরে বললেন, "যাও চান করে,খেয়ে ঘুমোও,আজ তুমি খেলতে যাবে না।" রাতে মনোজের বাবা রামহরি বাবু বাড়ি ফিরতেই মা তার কাছে নালিশ করেছিলেন,"তুমি এটা কী করে ছিঁড়লে?" সে উত্তর দিল, "খেলতে খেলতে এক ছেলে আমায় ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিল!" রামহরি বাবু বললেন,"তোমাদের স্কুলে কেন গাছে চড়তে দেয় বল তো?"
মনোজের ভাইকেও শান্ত বলা যায় না, সে মনোজের থেকে দু বছরের ছোট হলেও দ্বিগুণ দুষ্টু। মনোজের ছোট ভাইয়ের নাম হলো মনোহর। সে-ও স্কুলে কম বাঁদরামি করত না। তবে তাদের দিদি খুব শান্ত ছিল এবং বাড়িতে কোনো দুষ্টুমি করলে কান ধরে দুটো চড় মারত। তার নাম ছিল মধুরা।
তাদের বাবা সকাল সাতটায় অফিসে যেত। তাদের অফিসে খালি রবিবার ও বিশেষ দিনে ছুটি দিত। একদিন রাত্রে মনোজ মনোহরকে ঘুম থেকে ডেকে বলল,"আচ্ছা মনোহর তুই কি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাচ্ছিস?" মনোহর কিছুক্ষণ কান পেতে শুনে বলল,"ওই হ্যাঁ দাদা, তো একটা খুট খুট শব্দ হচ্ছে। সেটাই না?"
এই কথা বলাবলির পর সে রাত্রে তারা ঘুমলো। কিন্তু পরদিন রাত্রে আবার সেই খুট খুট শব্দটা জোরালো হয়ে উঠলো। মনোজ বললে,"মনোহর একবার বাইরের ঘরটা দেখে আয় তো।"
মনোহর গিয়ে যা দেখল,তাতে সে চেঁচামেচি শুরু করে দিল। মনোজ খাট থেকে লাফিয়ে নেমে এক দৌড়ে মনোহরের কাছে গিয়ে দেখে তার বাবার বুট-টা খুট খুট করে চলছে,যেন একজন সেটা পড়ে হাঁটছে। সেও চিৎকার জুড়লো। তার দিদি,মা আর বাবা এসে বললে
― কী হয়েছেটা কী?
― ঠিক ধরেছিস।
― দিদিকে ডেকে বলতে যাবে?
― পাগল নাকি? আবার রাত্রে ঝামেলা শুরু করে দেবে!
― আচ্ছা, তবে আমি ঘুমাই?
― না, এখন ব্রেকফাস্ট করতে যা।
― মাঝ রাত্তির ব্রেকফাস্ট? ডিমটা কে ভেজে দেবে তুমি?
― তবে রে, ঘুমো!
মনোজ আর মনোহর বাবার বুটটার দিকে আঙুল দেখালে তিনজনেই খুব অবাক হয়ে গেল। মধুরা আর তার মা তো অজ্ঞানই হয়ে গেল।রামহরি বাবু কাছে এসে বুটগুলোকে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এরপরে মনোজ আর মনোহরের কিছুই মনে ছিল না।
কিছুদিন পরে রাত্রে মধুরির চিৎকারে মনোজ আর মনোহরের ঘুম ভেঙে গেল।তারা দৌড়ে মধুরার ঘরে গিয়ে দেখে,বাবা ও মধুরা বাইরের তালগাছটার দিকে তাকিয়ে আছে জানলা দিয়ে। মা ঠাঁই অজ্ঞান। তারা একসাথে জানালায় হাজির।অনেক ঠেলাঠেলি করে দেখলো, তাল গাছের মাথায় একটা কালো ছায়া হাওয়ার সাথে দুলছে। দুটো জ্বলজ্বলে হলদে চোখ দিয়ে যখন মনোহরের দিকে তাকালো তখন সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। পরের সকালে মনোহরের কী, কারোরই কিছুই মনে ছিল না আগের রাত্রে কী হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলির একটিমাত্র সম্পর্ক ছিল।কারোরই এই অলৌকিক ঘটনাগুলি অনুভব করার পরেও তার ব্যাপারে কিছু মনে থাকত না। রামহরি বাবু গির্জা থেকে ও অনেক জায়গা থেকে লোক ডেকেছিলেন, কেউ সমস্যার সমাধান করতে পারত না। তবে একটি অদ্ভুত ঘটনা হত।সেই লোকেরা
সবাই এক একদিন রাত্রে ফোন করে বলতেন যে তারা ব্যাপার বুঝে গেছেন। কাল সব বলতে আসবেন। কিন্তু কারোরই পরদিন থেকে হদিশ পাওয়া যায়নি। একদিন মনোজ বাবার সাথে ঘরে ফিরছিল। যেই তারা তালগাছটার তলায় এসেছে, এক হাড়ি দই দমাস করে রামহরি বাবুর মাথায় পড়লো। অবশ্য মনোজ প্রথমে কিছু বোঝেনি। তারপর এগিয়ে একটু করে দই চাখতে গেল। খেয়েই সে উপরে তাকালো ― কেউ নেই। রামহরি বাবুর ততক্ষণে মাথায় খুন উঠে গেছে। সে তৎক্ষণাৎ তার বুট-টা খুলে ছুড়ে মেরেছেন তাল গাছের মাথায়। সেটি ভূতটার গায়ে লাগলো কিনা মনোজ দেখতে পাইনি,কারণ এক হাঁড়ি দই এখন তার মাথায় এসে ফাটলো। সে তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।তবে আর কোনদিন সেই বাড়িতে ভূতের উপদ্রব হয়নি।
শ্রেয়াস পাল