এই গল্পটা একটি বুদ্ধিমান ছেলের।
তার নাম বরুণ, বয়স এগারো বছর। ক্লাস ফাইভে পড়ে। তাকে বুদ্ধিমান বলছি কেননা, বিজ্ঞানে সে এক্সপার্ট। বিজ্ঞানের সাথে জড়িয়ে আছে তার সঙ্গী অঙ্ক । এই দুটি বিষয়ই বরুণের খুব ভালো লাগে। পরীক্ষায় অঙ্ক ও বিজ্ঞানে ওর একশোর ঘর বাঁধা।
আজ রবিবার। স্কুল ছুটি থাকলেও বরুণের ছুটি নেই। ফাঁকা সময়ে খাতায় নানারকম গেজেটের ছবি আঁকে ও বানাবার চেষ্টা করে।
অবশ্য তার যন্ত্রপাতির জন্য মাঝেমধ্যে অনলাইনে অর্ডার দিতে হয়। বরুণ ভাবছে আজ কি বানানো যায়। হঠাৎ ওর মনে পড়ে রোবটের কথা। যখন বরুণ ক্লাস ফোরে পড়ত, তখন সৈকত হালদার নামে ক্লাস সিক্সের একটি ছেলে একটি রোবট বানায়। সে রোবটটাকে স্কুলে নিয়ে যায় এবং খুব প্রশংসা পায়। বরুণের ইচ্ছে হল সেও একটি রোবট বানাবে।
একটি রোবোটিক ডগ। ব্যাস, তক্ষুনি বরুণ ওর মায়ের জামাকাপড়ের ছবি আঁকার খাতাটা নিয়ে আঁকতে বসল।
খাতাটার মধ্যে প্রথম দুটি পৃষ্ঠাতে জামাকাপড়ের ছবি আছে। বাকি পাতাগুলোয় নানারকম গেজেট, মেশিন, যন্ত্রের ছবি। একটি ফাঁকা পাতায়। বরুণ আস্তে আস্তে পুরো অবয়ব এঁকে নিল।তারপর অনলাইনে যন্ত্রপাতির অর্ডার দিল। অর্ডার দেওয়ার কয়েকদিন পরে জিনিসগুলো এল। তারপরে একদিন সে সত্যিই বানাল রোবোটিক ডগ। বরুণ কুকুরটাকে তিনটি গুণ দ্বারা তৈরি করল। ও শুনতে পারে, ভয়েস রেকর্ড করতে পারে ও সত্যিকারের কুকুরের মতো বাতাসে কোনো অচেনা গন্ধ পেলে গন্ধটার লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে। এই ত্রিগুণ সম্পন্ন কুকুরটাকে, স্কুলে ও বাড়িতে দেখিয়ে খুব প্রশংসা পেল।
একদিন বরুণের দাদু বিজয় চক্রবর্তীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। প্রত্যেকদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সকাল সাতটায় ফেরেন, তবে আজ আর ফেরেননি। বিজয় বাবুকে যখন কোথাও পাওয়া গেল না, তখন বরুণের বাবা, বিনোদবাবু পুলিশে ফোন করেন। দারোগাবাবু জানান, কয়েকদিন ধরে জমিদার সাবর্ণ চৌধুরী লেন অঞ্চলে চার পাঁচটা গুন্ডা ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়তো ওরাই ওনাকে অপহরণ করেছে। বরুণের বাবা ফোন ছাড়েন। বরুণ মনখারাপ নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকল, যেখানে রোবো আছে।
বরুণ ওর কুকুরের নাম দিয়েছে রোবো। ওকে অনেকক্ষণ দেখতে দেখতে বরুণের মাথায় আইডিয়া খেলে গেল। বরুণ ওর বাবাকে বলে "বাবা, রোবোকে দিয়ে দাদুকে উদ্ধার করা যায় না!"
বরুনের বাবা বলেন , "কীভাবে?" বরুণ তখন ওর পুরো প্ল্যানটা বিনোদবাবুকে বোঝায়। শেষে উনি বলেন, বাঃ, ভালো ভেবেছিস তো!দাঁড়া, দারোগাবাবুকে ব্যাপারটা বলি।"
রাতে, বিজয় বাবু যেখান থেকে নিখোঁজ হন, সেখান থেকে বরুণ রোবোকে ছেড়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর রোবো হঠাৎ ডানদিকের মোড়ে ঘুরল। তখনই গাড়ি স্টার্ট করে পিছু নিলেন দারোগাবাবু ও তার দলবল, বরুণের বাবা ও বরুণ। রোবো কিছুদূর যেতেই বিনোদবাবু বললেন, "রোবো কোনদিকে যাচ্ছে?" বরুণ বলে,"জিপিএস ট্র্যাকার বলছে, আর কিছুদূর গেলেই একটা ফ্যাক্টরি পড়বে। নাম সরকার এন্ড সন্স।', সরকারদের ফ্যাক্টরিটা! সে যে মাসতিনেক ধরে বন্ধ। বিনোদবাবু বলেন।
রোবোর ভুল হয়নি। ওখানেই বিজয় বাবুকে পাওয়া যায় ও গুন্ডাগুলোকে পুলিশ গ্ৰেপ্তার করে। বরুণ দাদুকে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরে। এভাবে বুদ্ধি ও বিজ্ঞানের সাহায্যে বরুণ ও তার 'রোবো' বিজয়বাবুকে উদ্ধার করে।
-অর্কপ্রভ ঘোষাল