ঘুম ভেঙেই চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেল ঋক। মা আর বাপি দুজনের গলাই পাওয়া যাচ্ছে। চোখ রগড়াতে রগড়াতে শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং এ এল সে। মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচু।
"দাদাবাবু বিশ্বাস করুন পাঁচু আমার খুব ভালো ছেলে। ও গরীব হতে পারে কিন্তু চোর নয়। ওর হাতে কিছু থাকলে তো আমি দেখতেই পাব।"
কাঁদো কাঁদো গলায় বলছে কাবেরী। পাঁচুর মা।
"তোমার ছেলে ছাড়া তো আর কেউ ছিল না ঐ ঘরে। গতকাল ঋকের সাথে ঐ তো খেলা করছিল। আমাদের বাড়িতে আর কেউ তো আসেনি। " গলা চড়িয়ে মাধবী বলেন।
"কী হয়েছে মা? পাঁচুকে বকছ কেন?" ঋক বলল ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে।
"গত সপ্তাহে যে খেলনা এনে দিল তোর মামা সিঙ্গাপুর থেকে, সেটা তো তোর ঘরে নেই। গতকাল তোরা দুজন খেলা করেছিস। আর কেউ তো আসেনি। আমি শিওর পাঁচু নিয়ে গেছে যাওয়ার সময়।" মাধবী বলল।
"মা, মিছিমিছি ওকে দোষ দিচ্ছ।" ঋক বলে।
"কেন তুই জানিস কোথায় আছে খেলনাটা?" রমেশ বাবু বললেন।
"জানিই তো!" বলেই ঋক এক ছুট্টে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে গেল।
মিনিট কয়েক পরে চিলেকোঠার ঘর থেকে হাতে করে একটা খেলনা গাড়ি নিয়ে এল। তবে গাড়িটি ভাঙা।
"এ মা, এটা তো ভেঙে গেছে! তোর মামা এত সুন্দর গাড়িটা বিদেশ থেকে এনে দিল। সেটা ভেঙে ফেললি! একটু যত্ন করে রাখতে পারলি না!" বিরক্ত স্বরে বলে মাধবী।
"সে আমি মামুকে বলে দেব, কিন্তু তুমি আর পাঁচুকে বোকোনা মা। দুজনে, খেলতে গিয়ে ভেঙে গেছে, কী করব!" ঋক একটু কাচুমাচু হয়ে বলে।
পাঁচু চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। পাঁচুর মনে পড়ছিল গতকালের কথা। যখন ওরা খেলছিল। গাড়িটা খেলতে গিয়ে পাঁচুর হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়। ভয়ে ভয়ে ঋকদাকে বলেছিল, "কী হবে! মামিমা তো খুব বকবে। মা আমাকে আস্ত রাখবে না!"
ঋক হাসতে হাসতে বলেছিল, "তোর কোন ভয় নেই। আমি আছি, আমি তোর বন্ধু তো! তাছাড়া খেলছিলাম তো দুজনেই, মা-কে আমি বুঝিয়ে দিলে ঠিক বুঝবে।"
ঋক জানে পাঁচু ভেঙেছে শুনলে মা আরো বেশি রাগ করবে, তাই এভাবে বলাটাই ঠিক মনে করল। পাঁচুকে অমন করে বকলে কি আর গাড়িটা জুড়ে যাবে, তোমরাই বলো?
লেখক : সুদীপ ওম ঘোষ