সেদিন খুব বৃষ্টি পড়ছিল। স্কুলে তাই রেইনি ডে'র ঘোষণা করে ছুটি হয়ে গেছে। তিতির বুঝতে পারে না কী করবে! একা একা বসে থাকতে একেবারেই ভালো লাগছিল না। জানলার কাছে গিয়ে সময় কাটানোর জন্য বৃষ্টি দেখতে শুরু করল। হঠাৎ একটা জিনিস ও লক্ষ্য করল, একটা ছোট্ট চড়াই পাখি বাসা বানানোর চেষ্টা করছে। যদিও যতবারই ও বাসা বানাতে যাচ্ছে, ততবারই বৃষ্টির খেলায় বাসাটা ভেঙে যাচ্ছে। বেচারা কে দেখে তিতিরের বড্ড খারাপ লাগছিল। এই ঝড়-বৃষ্টির দিনে কোথায় থাকবে। মনখারাপ করে তিতির গুলমোহর গাছের ডালে, যেখানে চড়াই বাসা বানাচ্ছিল, সেই দিকে তাকিয়ে থাকে।
বিকেল গড়িয়ে আসে, সঙ্গে নিয়ে আসে ঝড়কেও। তিতিরদের বাড়িতে কারেন্ট চলে যায়। পিকলু মানে তিতিরের ভাই আর তিতির পড়াশুনা থেকে উঠে পড়ে। ঠাম্মি, দাদাই, মা, বাবা সবাই কাজকর্ম ছেড়ে জানলার কাছে চলে আসে। তাদের বাগানের প্রিয় গুলমোহর গাছটা পড়ে গেছে যে! তিতির অন্ধকারে কোন গাছ পড়েছে বুঝতে পারে না।
‘দাদাই, কোন গাছ পড়েছে??’
‘গুলমোহর গাছ দিদিভাই!’
দাদুর কথা শুনে কান্না পেয়ে যায় তিতিরের। গুলমোহর গাছেই তো চড়াই পাখির বাসা। একমূহুর্ত না ভেবে দৌড়তে থাকে তিতির। সবাই বোঝে নিশ্চই তিতির কোনো বিপদের কথা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সকলেই তিতিরের পিছনে দৌড়তে থাকে। তিতির দেখে পাখিটা একটা ডালের তলায় পড়ে আছে। তবে একটা ভালো ব্যাপার, পাখিটার খুব বেশি চোট লাগেনি। কয়েক দিন বিশ্রাম নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে। তিতির ওকে ঘরে নিয়ে যায়। পিকলু চটপট একটা বিছানা বানিয়ে দেয় কাপড়ের টুকরো দিয়ে।
(দশ-কুড়ি দিন পর)
― সমরেশ, সত্যি তোমার নাতনির জবাব নেই!
― রিমা বৌদি, নাতনি তোমার কী সুন্দর পাখিটার প্রাণ বাঁচাল! বড় ভালো মেয়ে।
― আদিত্য, দিয়া, তোমাদের মেয়েটা একটা মুক্তো!
'পিকলু, তোর দিদির মত আমারও একটা দিদি থাকলে ভালো হত। বেশ সুপারহিরোর মত!'
পাড়ার সকলেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিতিরের। আজ পাড়ায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। প্রথমেই তিতিরকে ডেকে নেওয়া হয় পুরস্কৃত করবার জন্য। সেদিন ওই চড়াইটার প্রাণ না বাঁচালে তো একটা ফুটফুটে পাখি প্রাণ হারাত। এই পরিবেশপ্রেমী তিতিরকে সবাই তাই গাছ উপহার দেবে ঠিক করল। দিনটা তিতিরের আজ খুব মজায় কাটবে বলে মনে হচ্ছে।
দূরে কোনো এক গুলমোহর গাছের ডালে বসে একটা ছোট্ট চড়াই পাখি যেন বলে উঠলো— "ধন্যবাদ!"
দেবাদৃতা ভাদুড়ি