Image-Description
Stories
ঝড়
Sep 16 2023 Posted by :  বিধাত্রী চট্টোপাধ্যায়

এই সেদিন খুব ঘটা করে তিন্নির দশ বছরের জন্মদিনটা হয়ে গেল। সে এখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে তিনি দিল্লিতে থাকেন। টানা ছুটি বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া তাঁর পক্ষে বাড়ি আসাটা সেভাবে সম্ভব হয় না। এবছর তিন্নির জন্মদিনে তার বাবা কয়েকদিনের জন্য এসেছিলেন। এরপর আবার পুজোর ছুটিতে তিনি আসবেন। তিন্নি তার মা আর ঠাকুমার সাথেই কলকাতায় থাকে। গত কয়েক দিন ধরে এখানে এমন গরম পড়েছে যে হঠাৎ করেই স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটি আরম্ভ হয়ে গেছে। এতে তিন্নির খুব মজা। সারাদিন সে বাড়িতে থাকে,খেলে,ছবি আঁকে,গল্পের বই পড়ে এমনকি নিয়ম করে পড়তেও বসে। লেখা-পড়া বিষয়ে ছোট থেকেই তাকে সেভাবে কিছু বলতে হয়নি। এসব বিষয়ে চিরকালই সে যথেষ্ট সচেতন।
     আজ একটু আগে ঠাকুরের সামনে সন্ধ্যাবাতি দেখিয়ে একতলায় তিন্নির ঠাকুমা টিভিতে খবর দেখতে বসেছেন আর দু'তলায় নিজের পড়ার ঘরে তিন্নি পড়তে বসেছে। তার দিদার শরীরটা হঠাৎ খারাপ হওয়ায় তিন্নির মা বিকেলে তাকে দেখতে গেছেন, তবে এখনো ফেরেননি। তাদের বাড়ি থেকে মাত্র একটা স্টেশন দূরে তিন্নির মামার বাড়ি। এদিকে বিকেলের পর থেকেই আকাশে একটু একটু করে মেঘ জমতে আরম্ভ করেছে। তিন্নি ভাবছিল তার দিদা এখন কেমন আছে, এখন কি তার মাকে ফোন করা উচিত হবে...! এইসব চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ করে একটা দমকা হাওয়ায় তিন্নি সচেতন হয়ে উঠল। সে জানে এখন কালবৈশাখীর সময়। মা তাকে সাবধান করে দিয়ে গিয়েছিলেন সুতরাং মুহূর্তের মধ্যে তিন্নি স্থির করে ফেলে তার কর্তব্য। তার পর এক দৌড়ে সে একতলায় নেমে আসে। ঠাম্মির ঘর আর ঠাকুরঘরের জানালাগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করে দেবার চেষ্টা করে। তারপর দোতলায় উঠতে থাকে সে। এর মধ্যেই উপরের ঘর থেকে ঝনঝন করে কাচ ভেঙে পড়ার শব্দ হল। নিশ্চয়ই কোন ঘরের জানলার কাচ ভেঙে গেছে! একসাথে দুটো করে সিঁড়ি লাফাতে লাফাতে তিন্নি প্রথমে বসার ঘর তারপর শোবার ঘরটা দেখে নিল। সেখানে মোটের ওপর সব ঠিকই আছে। ঘরের জানালাগুলো দ্রুত বন্ধ করে সে এক অজানা আশঙ্কায় প্রবেশ করল নিজের পড়ার ঘরে। কিন্তু একি! ঘরে ঢোকার মুখেই তার চোখ মেঝের দিকে আটকে গেল। গত বছর শান্তিনিকেতন থেকে বাবা- মায়ের সাথে গিয়ে সে 'বাউল রবীন্দ্রনাথ'-এর যে ছবিটা কিনে এনেছিল সেটাই দেওয়ালের একটা দিকে বড় ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় ঝুলছিল। হঠাৎ ঝড়ে কিভাবে যেন সেই ছবিটাই সাদা পাথরের মেঝের উপর আছড়ে পড়েছে। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অজস্র ছোট-বড় কাচের টুকরো। ঝড়ের সাথে একরাশ ধুলোবালি আর কয়েকটা শুকনো পাতা এসে ঘরটা একেবারে এলোমেলো করে দিয়েছে। খোলা জানালার কাঠের পাল্লা দুটো নিজেদের মধ্যেই ঠোকাঠুকি করে অবিরাম আওয়াজ তুলে যেন হাততালি দিচ্ছে। আর এসবের মাঝে ঊর্ধ্বমুখে একতারা হাতে নৃত্যরত রবীন্দ্রনাথের ছবিখানা সাজানো ঘরের কঠিন মেঝেতে পড়ে আছে।
        এখন তিন্নি ঠিক কী করবে সে যেন নিজেই বুঝতে পারছিল না! তার হুঁশ ফিরল ঠাকুমার হাতের স্পর্শে। তার পিছনে ঠাকুমা যে কখন এসে দাঁড়িয়েছেন এতক্ষন তিন্নি তা বুঝতেই পারেনি। এবার সে তার 'ঠাম্মি'কে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে ফেলল। কয়েকদিন আগেই সে মায়ের মুখে শুনেছিল -  রবীন্দ্রনাথ ঝড়ের গান গেয়েছিলেন। সেই কথাটাই তার বারংবার মনে পড়ছিল।
বাইরে তখন সত্যিই কালবৈশাখীর উদ্দাম নৃত্য চলছে।

বিধাত্রী চট্টোপাধ্যায়
 


Popular Books


Comments

  • Bijaylakshmi Mukherjee

    সুন্দর প্রয়াস

    Sep 20 2023
  • Monosree De

    খুব সুন্দর হয়েছে

    Sep 24 2023

Write a Comment