এক যে ছিল ছেলে। নাম তার ঘন্টু। ঘণ্টু খুব দুষ্টু ছিল। ও সারাদিন ওদের বাগানে ঘুরে বেড়াত, এ গাছের ও গাছের ডাল ভাঙত, পাতা ছিঁড়ত, ফড়িং প্রজাপতি ধরে তাদের ডানা ছিঁড়ত। ঘন্টুর একটা বদ অভ্যাস ছিল ― ও পশুপাখিদের বিরক্ত করে খুব মজা পেত।
ঘণ্টুদের বাড়িতে একটা পোষা বেড়াল ছিল তার নাম মিঁউ। ঘণ্টু মিঁউয়ের লেজ ধরে টানত, কখনো কান মলে দিত আবার ঘেঁটি ধরে ন্যাৎ করে ছুঁড়েও ফেলে দিত। তাই মিঁউ ওর ধারেকাছে ঘেঁষতও না। একদিন ঘণ্টু মিঁউকে তাড়া করেছে আর মিঁউ ভয়ের চোটে ওদের লম্বা আমগাছটায় উঠে পড়েছে। উঠেছে কিন্তু নামতে পারছে না। এজন্য ঘণ্টুকে বাবা খুব বকেছে। ঘণ্টুর এবার খুব রাগ হয়েছে। কী! ওই মিঁউয়ের জন্য তাকে বকা খেতে হয়েছে! সে তাদের সিঁড়িঘর ওরফে গোঁসাঘরে গিয়ে বসে থাকল। বেরোল সেই দুপুরবেলা। বাপরে কী রাগ!
আবার ঘণ্টু পিঁপড়ে দেখলেই মেরে ফেলত নয়তো আধমরা করে ছেড়ে দিত। এইসব দুষ্টুমি করার জন্য তাকে ভুগতেও হয়েছে। একদিন ওদের ঘরের মেঝের উপর দিয়ে একটা কাঠপিঁপড়ে যাচ্ছিল। যেই ঘণ্টু ওটাকে ধরতে গেছে অমনি কাঠপিঁপড়েটা ঘণ্টুর হাতে জোরসে কামড় বসিয়ে দিল। চুন লাগিয়েও কমে না। দুদিন ধরে হাত ফুলে ঢোল। তারপর সেদিন মিঁউয়ের লেজ ধরে টানতে গেছে, মিঁউ হাতে এক থাবড়া বসিয়ে ছুট। ইনজেকশন নেবে না বলেছে ― তাই মায়ের ধমক খাও রে, সবার বকুনি খাও রে, সাথে আবার ব্যথা সহ্য করো রে! সে অনেক ব্যাপার! এতেও তার শিক্ষা হয় না। কুকুর বেড়ালদের দেখলেই ঢিল ছোঁড়ে। তাদের পাড়ার রাগী কুকুর লালুকে সে একদিন ঢিল ছুঁড়েছিল। লালু এমন তাড়া করেছিল যে তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। বাড়ির লোকেরা কত বারণ করত, কত বকত ― তাও সে শুনত না। এই দুষ্টুমি সে করবেই করবে।
এরপর ঘটল সেই ঘটনা। ঘণ্টুদের বাড়িতে একটা বড় জামরুল গাছ ছিল ― তার বাবার দাদুর লাগানো। গাছটাতে প্রচুর পাখি আসত। একদিন ঘণ্টু পাখির বাসা পাড়ার জন্য জামরুল গাছে উঠেছে। পাশের ডালে বোলতার চাক। হাত পড়ল গিয়ে সেই চাকে। যেই দুয়েকটা বোলতা তাড়া করেছে, ঘণ্টু হাত ফসকে সোজা মাটিতে ধপাস। ঘণ্টু চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ভয়ে তার মা ঠাকুমা বাইরে ছুটে এসে দেখল ঘণ্টু মাটিতে পড়ে। তার পা নীল হয়ে ফুলে ঢোল। মা তাকে তাড়াতাড়ি করে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে এল। তারপর সে কত্ত কান্ড! ডাক্তার দেখানো হল, এক্সরে হল আর পায়ে ইয়াব্বড় এক প্লাস্টার হল।
ঘণ্টুর এখন খেলতে যাওয়া, আগানে - বাগানে ঘোরাও বন্ধ। সারাদিন সে বিছানায় বসে থাকে আর জানলা দিয়ে পাখি আর প্রজাপতি দেখে। এখন মিঁউও তার ঘরে আস্তে আস্তে আসে। ঘণ্টুও মিঁউকে আগের মতন তাড়িয়ে দেয় না। তাকে বিস্কুট দেয়, তার গায়ে হাত বোলায়। ভালোই তো লাগে। মিঁউয়ের সঙ্গে এখন তার ভারী ভাব। মিঁউ তার খাটে ওঠে। মিঁউকে কোলে নিয়ে বলে, "আমি আর তোদের মারব না। প্রজাপতিদের ডানা ছিঁড়ব না। আমি এখন থেকে তোদের বন্ধু, হ্যাঁ মিঁউ!"
মিঁউ বলল, "মিঁউ।"
শরণ্যা সিনহা