Image-Description
Stories
রিমির বর্ষা
Jul 17 2023 Posted by : montajpublishing

বর্ষা নেমেছে। আকাশ কালো মেঘে ভরে গিয়ে খালি ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। রিমি  তাদের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার উপর বৃষ্টি পড়া দেখে। আর খাতায় লিখে রাখে বর্ষা কালে কী কী হয়।

শহরের মেয়ে রিমি। গাড়িতে করে বাড়ির গেট থেকে সে স্কুলে যায়। সেখানে সে বাইরের পৃথিবীটাকে দেখতে পায় না। বাড়ির বারান্দা আর মাঝে মাঝে বিকালের মাঠ তার খেলার জায়গা।

সে বইতে পড়েছে, বর্ষা কালে আকাশে মেঘ থাকে, সারাদিন ধরে বৃষ্টি পড়ে। ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। পথ ঘাট সব কাদা হয়ে যায়। চারিদিক জলে ভরে ওঠে। গাছপালা সবুজ হয়ে ওঠে।

সে জলে ভরে ওঠা পথ দেখেছে। বৃষ্টি বেশি হলে পথ জলে ভরে ওঠে। আবার পরে সেই জল সরে যায়। বাবার কাছে সে শুনেছে, রাস্তার পাশে নর্দমা দিয়ে সব জমা জল নদীতে চলে যায়। শহরে রাস্তায় কাদা হয় না। সব পাকা রাস্তা। এর বেশি আর সে বর্ষা কালের কিছু জানে না।

রিমির মামার বাড়ি গ্রামে। সে বর্ষা কালে কখনও মামার বাড়ি যায়নি। খবর এসেছে ওর দাদুর শরীর খারাপ। তাই এই বর্ষায় রিমি ওর মামার বাড়ি যাবে।

একদিন তারা বেরিয়ে পড়ল মামার বাড়ি যাওয়ার জন‍্য। 

রেল গাড়িতে বসে সে জানলা দিয়ে বাইরেটা তাকিয়ে দেখছে। গাছেরা কেমন মাথা নীচু করে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মাখছে। সবুজ মাঠ আর কত গাছ। রিমি এমনভাবে দেখেনি আগে, তাই দেখে খুব মজা পাচ্ছে।

রেল গাড়ি থেকে নেমে তারা রিক্সাতে উঠল। রিমি এর আগে রিক্সা খুব বেশি চড়েনি। তবে এমন ঢাকা দেওয়া ছিল না। তখন চারিদিক খোলা ছিল। বর্ষায় চারিদিকে বড় বড় পলিথিন কেটে ঘিরে দিয়েছে। যাতে বৃষ্টি-ফোঁটা যাত্রীদের গায়ে না পড়ে। 

রিমি শুনেছে পলিথিনের ওপর আছড়ে পড়া বৃষ্টির চড়বড় আওয়াজ। মাঝে মাঝে সেই আওয়াজ জোরে হচ্ছে আবার আস্তে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। সে বৃষ্টির এমন আওয়াজ কখনও শোনেনি।

এবার তারা গাড়ি থেকে নামল। এখানে পাকা রাস্তা শেষ। গাড়ি থেকে নেমে সে দেখতে পেল মামার বাড়ি ঐ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে সে কী করে যাবে বুঝতে পারছে না। বাড়িতে যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটা যেন কেমন হয়ে পড়েছে।

এবড়োখেবড়ো রাস্তা, মাটি গুলো কোথাও কোথাও কেমন যেন ঠেলে উঠে পড়েছে ওপর দিকে। তার মাঝে আবার জল জমে রয়েছে। 

মা তাকে কোলে নিয়ে জুতো খুলে সেই পথে চলতে শুরু করল। সে দেখতে পেল। মাটি জলে গলে গিয়ে কেমন চটচটে হয়ে পড়েছে। চলার সময় মায়ের পায়ে সেই মাটি লেগে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সেখান থেকে আওয়াজ করে জল লাফিয়ে উঠে পড়ছে উপর দিকে। তাড়াতাড়ি হেঁটে চলা যায় না। পা গেঁথে গিয়ে আটকে ধরছে তায়।

পাশের মাঠের মতো জায়গা গুলো জলে ভরে গেছে। চাষীরা সবুজ ধান গাছ পুঁতছে গোটা মাঠ জুড়ে। 

মা তাকে বাড়ি দাওয়াতে নামিয়ে দিলে সে ছুটে ঘরে ঢুকে গেল। ঘরের ভেতরে গিয়ে পিছনের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পুকুর দেখতে পেল, কত বক এসেছে। রিমি আগে বক দেখেনিপ, ছবি দেখেছিল। অবাক হয়ে দেখছিল সে।

পুকুরটা জলে ভরে গেছে। সামনে পুকুরের পাড়ে ডাঙার দিকে চেয়ে দেখল পুকুরের জল থেকে মাছেরা কেমন ডাঙার দিকে এগিয়ে চলেছে। তাদের চলা আবার এক রকম না। কেউ এঁকে বেঁকে চলেছে। কেউবা লাফিয়ে চলেছে। আবার কেউ কানকো দিয়ে মাটি বেয়ে চলেছে।

রিমি বাবার কাছে জেনেছে ঐ কানকো দিয়ে বেয়ে চলা মাছটি হল কই মাছ। ওরা নাকি গাছেও চড়তে পারে! আর লাফিয়ে চলা মাছটি হল শোল মাছ। বাকি সব শিঙি মাগুর। মামা ওদের ধরে ফেলেছে।

রিমি জানত না যে বর্ষা কালে চাষবাস হয় আর জল থেকে ডাঙায় মাছ ওঠে। কাদা কেমন দেখতে! মাঠ ঘাট কেমন জলে ভরে যায়। কীভাবে ধান পোঁতা হয়। স্কুলে বন্ধুদের গল্প করেছে। তারা তো কেউ দেখেনি তাই সত‍্যি বলে মানতে চায় না।

পরীক্ষায় বর্ষা কাল রচনায় রিমি সেই সব কথা লিখেছে। শিক্ষক মশাই খুশি হয়ে তাকে বেশি নাম্বার দিয়েছে। তেমন নম্বর কেউ পায় নি। রিমি বাবাকে বলেছে, সে আবার গ্রামে যেতে চায়।

মনোরঞ্জন ঘোষাল


Popular Books


Comments

  • GcmudkxsY

    BPIDjFXhamKZq

    Jan 29 2024
  • GcmudkxsY

    BPIDjFXhamKZq

    Jan 29 2024
  • GcmudkxsY

    BPIDjFXhamKZq

    Jan 29 2024

Write a Comment