Image-Description
Stories
যুগান্তর ঠাম্মার জগন্নাথ দর্শন
Jun 28 2023 Posted by : montajpublishing

আজ রথের দিন "যুগান্তর বুড়ি" এর কথা খুব মনে পড়ছে। না না, ভুল করে বলে ফেলেছি। সরি! অপরাধ নিও না, ঠাকুর। আমাদের উনি "যুগান্তর ঠাম্মা"। 
         বড়দারা ওনাকে যুগান্তর বুড়ি, নাম দিয়েছিল। তবে ঐ নাম ধরে, ওনার সামনে ওনাকে ডাকার হিম্মত কারো ছিল না। কারণটা সম্ভবত ওনার প্রবল ব্যক্তিত্ব। সামনাসামনি ওনাকে মাসীমা বলেই ডাকত পাড়ার ছেলেরা।               
        মাসীমার নিজের দুই ছেলে। একজন এ বাড়িতেই থাকে। নীলকান্ত হাই স্কুল এর টিচার। কেমিস্ট্রি পড়ান। ছোট ছেলে ব্যাঙ্গালোরে থাকে। মেশোমশাইকে আমরা কেউই দেখিনি। অনেক আগেই গত হয়েছেন। 
      বড়দারা যখন নাইন টেন এর ছাত্র তখন থেকেই দেখে আসছে, রোজ সকাল হলেই মাসীমা রোলগোল্ডের ফ্রেমের মোটা কাঁচের চশমা পরে, একতলার বারান্দায় এসে বসেন। সঙ্গে থাকে "যুগান্তর" নামের একটি খবরের কাগজ। "যুগান্তর" কাগজটি বছর পঁয়ত্রিশ আগে বেশ জনপ্রিয় খবরের কাগজ ছিল শুনেছি। এখন আর বের হয় না। মাসীমা ,যুগান্তর এর প্রত্যেকটি পাতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। একই সাথে পথচলতি পাড়ার ছেলে বৌদের সাথে নিয়ম করে গপ্প করেন। কার বাড়িতে ছেলে পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট করেছে, কার বাড়ির মেয়েটি অসুস্থ হয়েছে এ সব খবরে ওনার ঝুলি সর্বদাই পূর্ণ। খবরের কাগজ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের খবর এবং স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে পাড়ার ঘটনা প্রবাহের যাবতীয় খবর ওনার নখদর্পণে থাকত বলেই, বড়দারা ওনার নাম দিয়েছিল, "যুগান্তর বুড়ি"! 
      আমি ওনাকে দেখছি বছর কুড়ি ধরে। এখন ওনার বয়স নব্বই তো বটেই।  আমি ওনাকে "যুগান্তর ঠাম্মা" ডাকি। এখনও দিব্যি ফরসা গায়ের রঙ। ধবধবে সাদা সিল্কের মত চুল। চোখে সেই সোনালী ফ্রেমের চশমা। সাদা শাড়ি পরে, সকালে একটা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে পাড়ার খবরাখবর নিয়ে চলেছেন। শুধু খবর নেওয়াই বা বলি কি করে! সাধ্যমত সমস্যার সমাধান করতেও তো দেখেছি ওনাকে। কাউকে হয়ত ডেকে বললেন, হ্যাঁ রে, তোর পাশের বাড়ির পরিমলের, দুদিন ধরে বমি হচ্ছে, জানিস? ওকে ডাক্তার দেখাবার ব্যবস্থা কর তো। বেচারির একটাই ছেলে, তাও বিদেশে থাকে। ওর দেখার কে আছে বল? 
     সেদিন আমার হাতে আবার একশটা টাকা দিয়ে বললেন, একটা কাজ করে দিবি ,ভাই? সামনের বস্তিতে তমালরা থাকে , ওদের বাড়ি গিয়ে এটা দিয়ে আয় তো। তমালের বাবা চারদিন কাজে যেতে পারেনি। আজ বাজার করার টাকা নেই। 
     আমি দিয়ে এসেছিলাম। লক্ষ্য করেছিলাম, তমালের মা টাকা পেয়ে বেশ অবাকই হয়ে গিয়েছিল। 
     একবার একটা কেস খেয়েছিলাম। মনে আছে। আসলে আমাদের বাড়িতে শনিবার করে নিরামিষ খাওয়া হয়। মায়ের গুরুদেবের নির্দেশ। কঠোর ভাবেই সে নির্দেশ পালন করা হয়। সেদিন ছিল শনিবার। বাড়ির সবাই গিয়েছিল দিদির অসুস্থ শ্বশুরকে দেখতে। আমি যাইনি । পরদিন একটা পরীক্ষা ছিল আমার, তাই। এদিকে বিকেলে পাঁঠার ঘুগনী নিয়ে রোজই হাঁক দেয়, গোবিন্দ। বাবা আবার এসব রাস্তার জিনিস খাওয়ার বিরুদ্ধে। ফাঁকা বাড়িতে সেদিন আর লোভ সামলাতে পারলুম না। পাঁচ টাকার এক প্লেট সাঁটিয়েই দিলাম। আমাদের বাড়ির নিয়মকানুন তো বাইরের লোক জানেনা। 
     পরদিন, পড়ে ফেরার পথে আমায় ইশারা করে ডাকলেন যুগান্তর ঠাম্মা। যেতেই বলেন, দেখ ঝন্টু, পশুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু মানুষের সে ক্ষমতা আছে। সে জন্যই তো সে মানুষ। তাই না রে, ভাই?  আমি প্রথমটা ঠিক ধরতে পারিনি। বললাম, হ্যাঁ, তা তো বটেই। ঠাম্মা বললেন, তাহলে গতকাল লোভটা সম্বরণ করতে পারলি না কেন? তুই মানুষ নোস?  এদিক ওদিক দেখে মাথা চুলকোতে লাগলাম আমি। অঙ্কের হিসেবে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল আমার। আর কেউ না জানুক, ঠাম্মা যে জানে আমরা প্রতি শনিবার নিরামিষ খাই এটা আমার জানা উচিৎ ছিল আমার, ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক খেয়াল করাটাও ঠিক খেয়াল করেছেন উনি। বললেন, ভয় নেই। তোর বাবা বা দাদাকে কিছু বলব না। কিন্তু যা বললাম,ভবিষ্যতে মনে রাখিস। 
     এরপর, আর কোনদিন ওই ভুল করিনি। যুগান্তর ঠাম্মা যাদু জানতেন? 
   কোভিডের জন্য যখন ইস্কুল সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন আবার দেখতাম বস্তির দুটো ছেলেকে বেশ কোভিডের প্রোটোকল মেনেই পড়াতেন ঠাম্মা। একবার মজা করার জন্য বলেছিলাম, আপনি ইংরেজিও জানেন নাকি? 
ঠাম্মা কিছু বলেননি। হেসে ছিলেন শুধু। বীরেন স্যার, ঠাম্মার বড় ছেলে পরে আমায় বলেছিলেন, আমার মা তখনকার দিনে ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল। প্যারি চরণ সরকারের ইংরেজির ফার্স্ট বুক, মায়ের এখনও মুখস্থ। 
        ঠাম্মার ছোট ছেলে বাবার বন্ধু। উনি মাঝে মধ্যে ব্যাঙ্গালোর থেকে আসতেন আর ঠাম্মা কে নিয়ে পুরী বেড়াতে যেতেন। ঠাম্মার নাকি ওটাই আবদার ছিল তার ছোট ছেলের কাছে। বাবার  কাছে শুনেছি আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছর আগে দাদুর সাথে ঠাম্মা কেদারনাথ দর্শন করতে গিয়েছিলেন। তখন যাওয়াটা কত কঠিন ছিল! প্রথমে ট্রেনে হরিদ্বার। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড় ডিঙিয়ে প্রায় সাড়ে এগারো হাজার ফুট উঁচুতে ওঠা কম কথা ছিল না। এখন তো বদ্রীনাথ মন্দির অবধি বাস যায়। তখন সেরকম ছিল না। দাদু গত হওয়ার পর আর কোথাও যেতে চাননি। শুধু মাঝে মধ্যে পুরীধাম ছাড়া। 
      ছেলেদের এক দারুণ অনুভূতির কথা বলে ছিলেন ঠাম্মা। বলেছিলেন, পাহাড়ের ওপর অত দূর্গম জায়গায় মন্দির কেন স্থাপন করা হয়েছিল জানিস? মানুষ, পাহাড়ে উঠতে উঠতে, হিমালয়ের ঐ বিশালতা, ওই বৈভব দেখতে দেখতে নিজের ক্ষুদ্রতাটা অনুভব করতে পারে। অতিকায় পাহাড়ের পর আরো উঁচু পাহাড়,আকাশ ছোঁয়া বরফের শৃঙ্গ,বরফ ফেটে বেড়িয়ে আসা ঝর্ণার গর্জন এসব দেখলে  মনে হয় ,আমি তো প্রকৃতির কাছে এক ক্ষুদ্র কীট। তখনই ঈশ্বরের প্রতি সম্ভ্রম জাগ্রত হয়। আমিত্ব নষ্ট না হলে ঈশ্বরের দেখা পাওয়া যায় না। বাবার কাছে এটা গল্প করেছিলেন ওনার ছোট ছেলে। শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কি অসাধারণ ব্যাখ্যা
      দাদু গত হওয়ার পর আর পাহাড়ে যাননি ঠাম্মা। তাছাড়া বয়সের কারণেও আর উঁচুতে উঠতে পারতেন না। তবে মাঝে মধ্যে পুরী যেতেন শ্রী জগন্নাথ দর্শন করতে। বলতেন, সমুদ্রের কাছে গেলেও অমন অনুভূতি হয়। দিগন্ত বিস্তৃত, যেদিকে তাকাও শুধু জল আর জল, নীল জল আর তাতে অবিশ্রান্ত আছড়ে পড়ছে সাদা ফেনা মাখা ঢেউ এর পর ঢেউ, দেখলে  নিজেকে নিয়ে গর্ব একমূহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। তখনই জগন্নাথ দর্শন সার্থক। 
       গতবছর রথের দিন পুরী ধামে যাওয়ার ঠিক ছিল ওনার। তার আগে একবছর করোনার কারনে রথযাত্রায় সাধারণ মানুষকে আসতে দেওয়া হয়নি। ছোট ছেলে তাই গতবছর  আগে থেকেই সব টিকিট কেটে, হোটেল বুক করে রেখেছিলেন। কিন্তু গত বছরও ওড়িশার প্রশাসন সাধারণ ভক্তদের রথযাত্রায় আসতে নিষেধ করে দেয়। করোনা, আবার মাথা চারা দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতেই হয় ওদের। শেষ মুহূর্তে যাত্রা ভেস্তে যেতে বেশ মনমরা হয়ে যান ঠাম্মা। ছোট ছেলে কে নাকি বলেছিলেন, ভেবে ছিলাম যাওয়ার আগে আরেকবার মহাপ্রভু দর্শন করব, সে আর বোধহয় হল না রে!
       গত বছর রথের দিনটা এখনও মনে পড়ে। বিকেল বেলা কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘলা। চারদিক কেমন গুম মেরে আছে। আমি বেরিয়েছিলাম পাড়ার মোড়ের মিষ্টির দোকান থেকে জিলিপি আনতে। বড়দাই পাঠিয়েছিল। যুগান্তর ঠাম্মা দেখি বারান্দায়, রেলিং-এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। রাস্তাঘাট কেমন খাঁ খাঁ করছে। অনান্য বার এখানকার চৈতন্য মন্দির থেকে একটা রথ বের হয়। গতবছর সে রথও বের হয়নি। করোনার জন্য,সব ধরনের লোকসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।পুলিশ খুব কড়া ছিল এ ব্যাপারে। এমনকি আমাদের পাড়ার যে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো ওদের ছোট কাঠের রথ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ত, তারাও গতবছর কেউ বেরোয়নি। 
         সন্ধ্যে হওয়ার ঠিক আগে আগে, হঠাৎ দেখি, বস্তির দিক থেকে ছোট্ট তমাল মুখে মাস্ক পরে বেরিয়ে পড়েছে। বছর আটেক বয়েস। হাওয়াই চপ্পল পরে কী যেন একটা টানতে টানতে নিয়ে আসছে আর চেঁচাচ্ছে, 'জয় জগন্নাথ ,জয় জগন্নাথ'। 
     ভাল করে দেখলাম। ওটা রথ নয়। একটা থার্মোকলের ঢাকনা খোলা বাক্স মতন। ফ্রীজ বা ওয়াশিং মেশিন কিনলে,ডেলিভারি দেওয়ার সময় অমন থার্মোকলে মুড়ে দেওয়া হয়। তাতে জগন্নাথ আর সুভদ্রার দুটি মাটির ছোটো মূর্তি। বলরামের জায়গায় একটা খেলার পুতুল বসানো। ফুল আর পাতা দিয়ে দিব্যি সাজানো। চাকা আর লাগাতে পারেনি বোধহয়। বাক্সটার গায়ে একটা ফুটো করে তাতে দড়ি বেঁধে সেটাকেই রথের মত টানছে সে। যাতে ওর রথ উল্টে না যায় তার জন্য বুদ্ধি করে রেল লাইন থেকে দু-তিনটে পাথর নিয়ে এসে চাপিয়ে দিয়েছে রথে। কি আনন্দ বাছাধনের! পেছন পেছন দেখি, আবার বাঁশি বাজাতে বাজাতে ওর দিদিটাও চলেছে। 
    আমার হাতে একটা নকুলদানা দিল তমালের বোনটা। ঠাম্মা দেখি, আস্তে আস্তে নেমে এল রাস্তায়। কাপড়ের খুঁট থেকে দশ টাকা বের করে দক্ষিণা দিল, তমালের জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে। তারপর তমালের হাত থেকে রথের রশিটা নিয়ে টান দিয়ে বলে উঠলো, 'জয় জগন্নাথ'। তমাল এবার রথে রাখা চারটে নকুলদানা এনে দিল ঠাম্মাকে। বলে, এই নাও ঠাম্মা, প্রসাদ। দুহাত পেতে সে প্রসাদ নিলেন ঠাম্মা। কিন্তু তারপর যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না একেবারেই। 
     ঠাম্মা, দুহাত জড়ো করে দাঁড়ালেন ঐ রথের সামনে আর চোখ বন্ধ করে কেঁদে ফেললেন ঝরঝর করে। মুখে মৃদু ভাবে আউড়ে যাচ্ছেন, জগবন্ধু... জগবন্ধু.. 
      আমি, তমাল আর ওর দিদি ,আমরা তিনজনই অবাক হয়ে দেখলাম এই অপূর্ব  দৃশ্যটি। ঐ মিনিট দু-তিন যেন মনে হচ্ছিল ঠাম্মা এখানে নেই। শ্রীক্ষেত্রে, স্বয়ং মহাপ্রভুর সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। তারপর চোখ মুছে আবার গিয়ে বসলেন ওনার বারান্দায়। আমি ধরে ধরে নিয়ে গেলুম। 
      দশ টাকা পেয়ে তমাল আর ওর দিদি মহানন্দে এগিয়ে গেল বাঁশি বাজাতে বাজাতে। ঠাম্মা আমার দিকে চেয়ে বললেন, পুরীর জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন হয়ে গেল। আমি দুষ্টুমি করে বলি, থার্মোকলের, চাকাহীন রথ আর পুতুল বলরামকে দেখে পুরীর ঠাকুরের কথা মনে পড়ল? ঠাম্মা বলে, আসলে কি জানিস,ঝন্টু, আমাদের মনটাই হল আসল। এই রথের রশি ধরে তুমি যদি মনে মনে গভীর ভাবে ভাবো, শ্রীক্ষেত্রের রথের রশি ধরে আছো তাহলে দেখবে সেখানেই পৌঁছে গেছ। শুধু দরকার ঐ চিন্তার জন্য কোনো সূত্র। তমালের রথের রশি ঐ চিন্তার সূত্রটাই ধরিয়ে দিল। কথাটা আমি অনূভব করতে পারিনি বটে, কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারিনি সেদিন। আর যাই হোক এক নব্বই বছরের মানুষের ঐ সময়ের  মুখের অভিব্যক্তি, অবিরাম অশ্রুপাত, পুরোটাই কৃত্রিম হতে পারে না। ঠাম্মা সেদিন, একটা ছোট গল্পও বলেছিলেন আমায়। 
      মহাভারতে, যুধিষ্ঠিরকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল,         
      
                        কী বেগবান বায়ুর চেয়ে? 
                        কী সে বাড়ে তৃণের চেয়ে?   
                        
উনি, উত্তর দিয়েছিলেন, 

                         মন বেগবান বায়ুর চেয়ে।
                          চিন্তা বাড়ে তৃণের চেয়ে। 
                          
হাওয়ার চেয়েও তাড়াতাড়ি মানুষের মন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। তারপর ঠাম্মা যা বললেন, তা শুনে তো আমার চক্ষু স্থির হওয়ার উপক্রম। বললেন, এখনকার বিজ্ঞান অবশ্য বলে, আলোর চেয়ে গতিবেগ কারো বেশী হতে পারে না। কিন্তু ঐ বিজ্ঞান তো আর মনের খবর রাখে না। রাখলে বুঝত। মহাভারতের সময়ে আলোর বেগ সম্বন্ধে অত ধারণা তো সাধারণ মানুষের ছিল না তাই হাওয়ার বেগকেই সবচেয়ে বেশী মনে হত। 
          বিস্মিত আমি ভাবি, এ তো আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির তত্ত্ব। এটা উনি জানলেন কী করে? জিজ্ঞেস করেই ফেলি, আপনি থিওরি অফ রিলেটিভিটি পড়েছেন? ঠাম্মা হেসে বললেন, না রে। কাগজে একবার অমন একটা লেখা পড়েছিলাম। 
      দুষ্টু ছেলে হিসেবে বরাবরই আমার একটা সুনাম আছে। সুযোগ পেলে বড়দেরও পেছনে লাগি। সেদিন কিন্তু যুগান্তর ঠাম্মা কে পায়ে হাত দিয়ে একটা প্রণাম করেছিলাম। 
       গত ডিসেম্বর মাসে একদিন বেশ ঠান্ডা পড়েছে। সন্ধ্যেবেলা ফেরার সময়ে দেখি ঠাম্মাদের বাড়ির সামনে প্রচুর লোকের ভীড়। কাচের স্বর্গরথে  নিশ্চিন্তে শুয়ে রয়েছেন যুগান্তর ঠাম্মা। গাড়ি ছাড়ার সময়, সবাই জিজ্ঞেস করছে, কোথায় নিয়ে যাবেন, সাহাগঞ্জ বার্নিং ঘাটে নাকি কেওড়াতলা? বড় ছেলে, কেমিস্ট্রি স্যার বললেন, মেডিকেল কলেজ, কলকাতায়। মা, দেহ দান করে গেছেন। 
      এ বছর করোনার ঐ বাড়াবাড়ি আপাতত নেই। পুরীতে দুবছর পর আবার  আগের মত রথযাত্রা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এসেছেন। টিভিতে সকাল থেকে সম্প্রচার চলছে। পাড়ার রথটাও বাড়ির সামনে দিয়ে গেল একটু আগে। বিকেল হতেই বাচ্চাগুলো কাঠের রথ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে, বাঁশি বাজাতে বাজাতে। ঠাম্মাদের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছেন জিতেনকাকা, ঠাম্মার ছোট ছেলে। আমার সাথে চোখাচোখি হতে, আফসোস করে বললেন, মা যদি আর কিছু দিন বাঁচত..শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারলাম না। আমি গতবছরের ঐ ঘটনাটা বললাম জিতেনকাকাকে। বললাম, "তুমি নিশ্চিন্তে থাকো কাকা, ঠাম্মার শেষ ইচ্ছে ঠাম্মা নিজেই পূরণ করে নিয়েছেন। মহাপ্রভুর কোলে উনি ঠাঁই পেয়ে গিয়েছেন সানন্দে।"
      
সমাপ্ত

মনোরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


Popular Books


Comments

  • rdcZtkKshuYCPIE

    dUAsGHIE

    Jan 29 2024
  • rdcZtkKshuYCPIE

    dUAsGHIE

    Jan 29 2024
  • rdcZtkKshuYCPIE

    dUAsGHIE

    Jan 29 2024
  • VgHNlWmoP

    BbpGqKWyhTeYS

    Feb 7 2024
  • VgHNlWmoP

    BbpGqKWyhTeYS

    Feb 7 2024
  • VgHNlWmoP

    BbpGqKWyhTeYS

    Feb 7 2024

Write a Comment