Image-Description
Stories
মাঝরাতে
Aug 21 2023 Posted by : Admin

ভয় কাকে বলে জানেন নববাবু। সারাক্ষণ তো তাঁকে ভয়ে ভয়ে ভয়ের মধ্যেই থাকতে হয়! সে যে কী ভয়! এই জন্য নববাবুকে রোজ হজমিগুলি খেতে হয়, চ্যবনপ্রাশ খেতে হয়, কানে তুলো গুঁজে থাকতে হয়। দুহাতে গোটা বারো তাবিজ ঝুলছে নাগরদোলার বাক্সের  মতো। গলায় কিছু নেই এখন অব্দি। তবে জঙ্গলের ধারে যার বাড়ি, সেই গোলপানা মুখ বুড়ি বলেছে –এর মধ্যে সে ব্যবস্থাও করে দেবে। শুধু এট্টুখানি শরবতি হিজলের পাতা লাগবে, যার আগায় হলদে ছাপ। তো সেই পাতা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। তবু বুড়ি চেষ্টা চালাচ্ছে। পেলেই তামার তাবিজে মন্ত্র দিয়ে পুরে দেবে সে পাতা। সেটাই নীল সুতোয় ঝুলিয়ে গলায় পরলে ভয় তো ভয়, ভয়ের বাবা, কাকাও নাকি নববাবুর পাশ ঘেঁষবে না।  
       নববাবুর মন মোট্টে ভাল নেই। কাঠ চেরাইয়ের কারখানায় ম্যানেজার হওয়ার পরে দুদিন ট্রেনিং পিরিয়ড ছিল গয়েরকাটায়। এখন সোজা পাঠিয়ে দিয়েছে চালসার ভেতরে। সেখানে কী জঙ্গল কী জঙ্গল রে বাবা! নববাবু যেখানে থাকেন, তার চারপাশেই কনকগোল ফুলের রাজত্ব। সমস্ত জায়গাটা হ...লু…দ হয়ে আছে ফুলের রঙে। রাত হলেই সব অন্ধকার! দিনেও কী নিঝঝুম। জঙ্গলের মধ্যে  কারা কেঁদে ককিয়ে কী বলে কান পেতে শুনেও কিছুই বোধগম্য হয়না নববাবুর। তাদের তো দেখা যায় না। তবে তারা আসে। মাঝরাতে! পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়! পা ঘষে ঘষে হাঁটে কারা! কাঠের ঘর। তক্তাগুলোয় ফাঁক রয়েছে। রাতের বাতাস হি হি হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে কম্বলের ভেতরে ঢোকার জন্য দাপাদাপি করে। আর নববাবু মাথা মুখ ঢেকে হু হু কাঁপতে থাকেন। মনে মনে ‘হরি নারায়ণ, এই ঘরেতে কর আগমন’ বলতে থাকেন। ঠিক তখন ফিস ফিস হিস হিস শব্দ শোনা যায়। কারা ঘরের চারপাশে হাঁটতে থাকে। উঁকি দিয়ে দিয়ে ঘরের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করে কারা!! 
      সব বুঝতে পারেন নববাবু। রি রি করে হাসে তারা! রাতটুকু শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন। রাত কেটে গেলেই কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে শাল গাছের নীচে বসে থাকেন। গায়ে রোদ পড়ে বেলা বাড়লে। চারপাশে জঙ্গলের বুনো গন্ধ।  
    ফুলমনি আসে বনবস্তি থেকে। বনের সরু পথ দিয়ে ওকে আসতে দেখলে  মনে তাপ আসে। ফুলমনির হাতের চা খেয়ে ভয়-টয় উড়ে যায়। এরপর লোকজন আসতে থাকে। সবই এলাকার লোক। দূরের বস্তি থেকে আসে ওরা। হাজিরা অনুযায়ী কাজ। কাঠ চেরাই এর পরে সেসব গুছিয়ে রাখা, হিসেব মিলিয়ে দেওয়া…কাজ কী কম? তবু ভাল লাগে নববাবুর। মানুষের সঙ্গ ভাল লাগে তাঁর। ফুলমনির জ্যাঠা বাহাদুর ভারি সুন্দর গল্প বলতে জানে। কালো গরুর দুধের চায়ে সুত সুরুত করে চুমুক দিয়ে  গুছিয়ে বসে গল্প বলে সে। কত পাহাড়ের গল্প, পরীর গল্প, বেঁটে বামনদের দেশের গল্প। নববাবু মন দিয়ে গল্প শোনেন। ঠিক দুপুরে আসে ফুলমনি একথালা ভাত,সব্জি , আর শুঁটকি মাছের লাল লাল ঝোল নিয়ে। বাহাদুর চকাস চকাস শব্দ করে খায়। দেখে নববাবুর বেজায় ইচ্ছে হল শুঁটকির লাল ঝোল খেতে। বাহাদুর ভারি খুশি হয়ে হাট থেকে নিয়ে এল শুঁটকি।
       সেই শুঁটকি মাছ ঢাকা দিয়ে রেখে গেছে ফুলমনি। কাল এসে রেঁধে দেবে। ওরা চলে গেল সন্ধ্যে নামতেই। নববাবু একা হয়ে পড়লেন। সামনের ঝোরা থেকে হাতমুখ ধুয়ে এলেন। এখানে খুব তাড়াহুড়ো করে সন্ধ্যে নামে, সঙ্গে করে নিয়ে আসে শীতকে। হু হু ঠান্ডায় যত না কাঁপুনি , মাঝরাতে কাদের আওয়াজে তার চেয়ে বেশি কাঁপুনি। রোজ মনে হয় সকাল হলেই এ জায়গা ছেড়ে অনেকদূরে চলে যাবেন। অনেকদূরেই তাঁর এক পিসি থাকে। সেখানে গেলে ভারি আদর পান নববাবু। কিন্তু পিসি সাতসকালে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে বলে। এতে নাকি শরীর ভাল থাকে। নববাবু মোট্টে ওসব পছন্দ করেননা । আরাম করে শুয়ে থাকতে কী ভালই না লাগে! কিন্তু এখন মনে হয় ভোরে হাঁটাহাঁটি বরং ভাল! এই গাছপালা , দূরের পাহাড় আগে খুব ভাল লেগেছিল। এখন ওই কী এক ঝামেলা শুরু হওয়াতে সব গেল গোলমাল হয়ে!
     সেদিন চালসার হাটে গিয়ে তামার মাদুলির খোঁজ করছিলেন। পাওয়া গেল। কিন্তু গোলপানা মুখ বুড়ি এখনও শরবতি হিজলের পাতা পায়নি ! নববাবু  মন খারাপ করে বুড়ির ছোট্ট কাঠের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে কুঁড়েঘরটা দেখলেন। বুড়ির বাড়ীর বাইরের দিকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে একটা কাঠের ঘর। বেজায় পুরনো।  ঘরটায় তালা দেওয়া। মরচে ধরেছে তালায়। মানে অনেকদিন খোলা হয়নি ঘরটা। কিন্তু ওই ঘরে আছেটা কী যে তালা দিতে হয়েছে!
      এই কুঁড়ে ঘরটাকে আগে খেয়াল করেননি নববাবু। এমন ঝোপঝাড়ে ঢাকা, যে চট করে নজরে পড়েনা।  হিজলের পাতা পাওয়া যায়নি বলে মন খারাপ ছিল। তাই আর কুঁড়েঘর নিয়ে কোনও কৌতূহল না দেখিয়ে চলে এলেন বাসায়। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে একটু হাঁটাহাঁটি না করলে ভাল লাগে না নববাবুর। ঘরের কাছাকাছি থাকেন। সেদিন মন ভাল ছিলনা বলে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে চলে এসেছেন , খেয়ালই হয়নি। শুঁটকির গরগরে ঝোলে এত ঝাল দিয়েছিল ফুলমনি, পেটটা ঢাম হয়ে আছে। এখনও ঠান্ডা সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি গায়ে। তাছাড়া ভুটিয়া কম্বল গায়ে জড়িয়ে রেখে ভারি আরামবোধ হচ্ছে। খানিক পরে যখন খেয়াল হল, দেখলেন বাসা থেকে খানিকটা দূরে এসে পড়েছেন।  সেই বুড়ির বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছেন। বুড়ি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়িটা অন্ধকার। বাড়ির সামনের ঝোপঝাড়ের মধ্যে কুঁড়েঘরটা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওখানে ওরা কারা দাঁড়িয়ে আছে? কী করছে ওখানে ওরা? একটু এগিয়ে দেখতে গিয়ে কিছুই দেখতে পেলেন না নববাবু। এটা কেমন হল? এই মাত্র দেখেছেন তিনখানা ছায়া  কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কী করছিল। 
      চোর নয়তো? ভাবতেই নববাবুর বুকে বীরত্বের জোয়ার খেলে গেল। চোর ধরার জন্য আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন দুটো বেড়ালের বাচ্চা আর তাদের মা দুটো বাচ্চা ছেলের সঙ্গে খেলছে। খেলতে খেলতে,হাসতে হাসতে ছেলেদুটো কুঁড়েঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। পেছন পেছন বেড়ালগুলো ঢুকে গেল। ওদের ছায়া ছায়া ল্যাজগুলো আর দেখা গেলনা! চারপাশ ফের সুনসান। কুঁড়ের ভেতরে হুটোপাটি শোনা যাচ্ছে।  
নববাবু বেজায় অবাক হলেন। কুঁড়েঘরে কি তালা নেই নাকি? 
   চাঁদের আলো ঝাপসা হয়ে ছড়িয়ে আছে চিকরাশি গাছের ওপর। কেমন একটা শিরশিরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। নববাবু আর বাইরে থাকতে সাহস পেলেন না। তাছাড়া পেটটা এখন একটু হালকা লাগছে হাঁটাহাঁটি করে। ফিরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই হয়। ফিরে আসতে গিয়ে একটা কথা মাথায় এল। বনবস্তির ছেলেরা রাতে খেলতে বেরিয়েছে। বেরিয়ে বুড়ির কুঁড়েঘরের তালা ভেঙে ঢুকেছে। বুড়িকে ব্যাপারটা জানাতে হবে। ছেলে দুটোকে একটু ধমকে দিলে কেমন হয়? না, এখন থাক। বুড়ি যা করার করুক। কী দরকার এসবের মধ্যে ঢোকার? এত রাতে, এত ঠান্ডার মধ্যে একা একা কিছু করতে যাওয়া ঠিক নয় । কথায় বলে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। এখন ফিরে গিয়ে ঘুমিয়ে নেওয়াই ভাল। কাল বনবস্তির লোকেরা এলে ছেলেদুটোর কথা জানতে চাইবেন নববাবু। ঘুমও পাচ্ছে। 
      রাতে শুনলেন কারা হেঁটে বেড়াচ্ছে বাড়ির চারপাশে। খুসখাস ঘুসঘাস শব্দ। জানালার কাছে কেউ জোরে শ্বাস ফেলল! ভয়ে ঘেমে গেলেন নববাবু। পাশ ফিরে শুতে পারছেন না এত ভয় করছে! ভুটিয়া কম্বলের নীচে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন! না না, কাল যেতে হবে বুড়ির কাছে। যেভাবে হোক হিজলের হলুদ ছোপঅলা পাতা পেতেই হবে। নাহলে মাদুলি পরতে পারছেন না। কারা আসে মাঝরাতে! কেন আসে? বাহাদুর কত কী জানে। ওকে জিজ্ঞাসা করলেই হতো। তিনি শুনেছিলেন অনেক রাতে কারা যেন নেমে আসে পৃথিবীতে। মেঘের ভেতর থেকে ভেসে এআসে তারা। সেই রকমই কিছু নয়তো? এই বন জঙ্গল পাহাড়ের রাজত্বে ছায়া ছায়া তারা আসে! বনের ভেতরে কত কী রহস্য থাকে, নববাবু তার কতটুকুই বা জানেন?
     পরদিন রোদ যখন কনকনে শিশিরের ওপর এসে পড়ল, তখন বাহাদুর এল ভুষো সোয়েটার গায়ে দিয়ে। নববাবু জিজ্ঞাসা করবেন বলে এট্টূ আড়ালে নিয়ে এলেন। কারণ বাকিরা যদি এসব শুনে টুনে ভয় পেয়ে কাজে না আসে! নববাবুর কথা মন দিয়ে শুনে মাথা নাড়ল বাহাদুর – 'ডর না পাউনু! ইহা থুপরো চুড়েল ছ। তোমাকে কিছু বলবেনা। চুড়েল বেড়াতে আসে এখানে। শুধু দরজা খুলোনা। বকাবকি করোনা কিন্তু। ওরা বকাবকি পছন্দ করেনা। রেগে গিয়ে কী না করতে পারে!'
    শুনে তো হয়ে গেছে নববাবুর। বুক, পেট একসাথে কাঁপতে শুরু করেছে । চুড়েল মানে শাঁকচুন্নি না ডাইনি ? 'মাগো মা! হয়ে গেছে গো আমার!' বলে নববাবু তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালেন। এখনই যেতে হবে বুড়ির কাছে, আর দেরি নয়!
    বুড়ি দরজা খুলে গোমড়া মুখে হাসি টেনে জানাল, পাতা সে পায়নি। তবে আশা ন ছোড়নু। আশা ছেড়ো না। 
মন খারাপ করে বুড়ির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে ভীষণ চমকে গেলেন নববাবু। তিনটে বেড়ালছানা বুড়ির বাড়ির সামনের ইসকুশ গাছের মাচার নীচে খেলা করছে। দুটো বাচ্চা বেড়াল, একটা এদের মা। এদেরকেই রাতে দেখেছেন তাহলে? বুড়িকে ছেলেদুটোর কথা বলতে গিয়ে নববাবু দেখলেন বুড়ি জংলি ফুল গাছ থেকে ফুল তুলছে। বেগুনি রঙের ফুল প্রিমুলা। বুড়ি ফুল নিয়ে কোথায় যাচ্ছিল, নববাবু সেদিকে গেলেন। বুড়ি  কুঁড়ে ঘরের তালা খুলল। নববাবু অবাক হলেন। কাল ছেলেদুটো তালা খুলেছিল কী করে? ফের তালা এঁটে চলে গেছে?
    বুড়ি আস্তে আস্তে দরজার তালা খুলে ঘরে ঢুকে যেতে নববাবুও ঢুকলেন। ঢুকেই অবাক হলেন। ঘরের মাঝখানে দুটো সমাধি! 
    বুড়ি সমাধিগুলোর ওপর ফুল সাজিয়ে দিল। নববাবুকে দেখে চোখ মুছল বুড়ি –আমার ছেলেরা। সেই কোন ছোট বয়সে মরে গেছে! কত বছর হয়ে গেল! বছরে একবার, ওদের মৃত্যুর দিনে দরজা খুলে ফুল দিই। 
  ফের তালা বন্ধ করে দিল বুড়ি কুঁড়েঘরের । 
― বাকি দিনগুলোয় কি দরজা বন্ধ থাকে সারা বছর?
― হ্যাঁ গো, ছেলেদুটো শান্তিতে থাকুক। নিজেদের মত থাকুক স্বর্গে। এই দিনে ওরা আসে মায়ের কাছে। ফুল নিতে। বুড়ি ফের চোখের জল মোছে। 
     নববাবু হাঁটতে পারছিলেন না। তিনি জানেন ছেলেদুটো রোজ আসে। স্বর্গ অনেক দুরের জায়গা। ছেলেদুটো এই কুঁড়ে ঘরটাকেই স্বর্গ বানিয়ে নিয়েছে। কেউ না জানুক, বেড়াল তিনটে সেকথা জানে! কিন্তু কাউকে বলেনা। নববাবুও কাউকে বলবেন না। কটা কনকগোল আর প্রিমুলা ফুল তুলে তিনি দরজার মুখে ছড়িয়ে দিলেন । সরু পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে বুক পকেট থেকে তামার মাদুলিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সেটা গড়াতে গড়াতে কোথায় পড়ল কে জানে! খটাং খট ঠক ঠকাস শব্দ তুলে হারিয়ে গেল মাদুলিটা।  
   আজ রাতে পাঁচজনের হুটোপাটি, খুসখাস, হাঁটাহাঁটি শুনতে শুনতে পাশ ফিরলেন নববাবু । খেলুক ওরা !
লেখক : সাগরিকা রায়
 


Popular Books


Comments

  • সুমিতা দাশগুপ্ত

    খুব ভালো লাগলো।‌মনটা ভরে যায়।

    Aug 22 2023
  • সুমিতা দাশগুপ্ত

    খুব ভালো লাগলো।‌মনটা ভরে যায়।

    Aug 22 2023
  • Sanatansekhar@gmail.com

    খুবই ভাল লাগল গল্প টা পড়ে ।

    Aug 23 2023
  • Sanatansekhar@gmail.com

    খুবই ভাল লাগল গল্প টা পড়ে ।

    Aug 23 2023
  • nWqhMOmpY

    RMNapAYWkowbxlD

    Jan 29 2024
  • nWqhMOmpY

    RMNapAYWkowbxlD

    Jan 29 2024
  • nWqhMOmpY

    RMNapAYWkowbxlD

    Jan 29 2024
  • KizktNxEnguhLa

    fwmEpWehdA

    Mar 14 2024
  • KizktNxEnguhLa

    fwmEpWehdA

    Mar 14 2024
  • KizktNxEnguhLa

    fwmEpWehdA

    Mar 14 2024

Write a Comment