Image-Description
Travels
বুবুনের বড় হওয়া
Aug 25 2023 Posted by : অনন্যা দাশ

ছোট্ট বুবুন কিছুদিন হল প্রিস্কুল ছেড়ে নতুন বড় স্কুলে যেতে শুরু করেছে। সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই সে ঘোষণা করল, “আজ টিচার অনেক কিছু লিখে নিয়ে যেতে বলেছেন!”  
মা শুনে বললেন, “কী?”
“এই দেখো! এগুলোকে চার্ট করে বানিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন!” বলে ব্যাগ থেকে এক তোড়া প্রশ্নের তালিকা বার করল বুবুন। 
মা এক ঝলক দেখে বললেন, “হুঁ! আমি রান্না করছি আর বাবার আজ অফিসে মিটিং আছে তাই ফিরতে রাত হবে। তুমি দিদিকে গিয়ে বলো, দিদি তোমাকে সাহায্য করবে।”  
বুবুনের দিদি তুতুল ক্লাস সেভেনে পড়ে। বুবুনের চেয়ে অনেকটাই বড়ো। দিদি টেবিলে বসে ছবি আঁকছিল।  
বুবুন গিয়ে বলল, “দিদি, ক্লাসের প্রোজেক্ট করতে দিয়েছে। মা বলেছে তুই সাহায্য করে দিবি!” 
তুতুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে, রঙ লাগানো তুলিটাকে জলে ডুবিয়ে রেখে বলল, “ঠিক আছে চল। কী করতে বলেছে?” 
“অনেকগুলো প্রশ্ন দিয়েছে। সেগুলোর উত্তর দিতে হবে আর সঙ্গে ছবি আটকাতে হবে!”  
“ও। ঠিক আছে তুই প্রশ্নগুলো বার কর আমি কয়েকটা পুরনো ম্যাগাজিন নিয়ে আসি। সেগুলো থেকে ছবি কাটতে হবে তো। কাঁচি আর আঠাও লাগবে।”  
প্রথমেই বুবুনের নাম, মা, বাবা, দিদির নাম সব হল, তাদের সবার ছবি লাগানো হল। কী খেতে ভালবাসেতে ধস্তাধস্তি করে কোনোরকমে আইস্ক্রিম আর চকোলেটে নেমে এসে দুটোর মধ্যে কোনটা লিখবে আর ঠিক করে উঠতে পারল না বুবুন!    
তুতুল বলল, “আর ভেবে সময় নষ্ট করতে হবে না! দুটোর ছবিই রয়েছে, দুটোই লাগিয়ে দে! টিচার কিছু বলবে না!” তাই দুটোই গেল।   
কোন জন্তু সব চেয়ে বেশি পছন্দতে আরো চিন্তায় পড়ল বুবুন। বাঘ লিখবে না সিংহ লিখবে না ডলফিন লিখবে না পান্ডা লিখবে? 
তুতুল ওর লিস্টি শুনে বলল, “দূর তুই একটা বোকা! বাঘ সিংহ সেই কবে একবার চিড়িয়াখানায় দেখেছিস আর মনে করছিস খুব ভালো! ওরা যদি ওদের ওই বোঁটকা গন্ধ নিয়ে এখানে চলে আসে না তুই হাঁউ মাঁউ করে পালাবি! মানে তোকে ধরে খেয়ে না ফেললে পালাবি! আর ডলফিন আর পান্ডা কখনো চোখে দেখিসনি, শুধু কার্টুন গিলে গিলে ভাবছিস ওরা কথা বলে, অনেক কিছু করে! এদিকে যে ভুলোর সঙ্গে সারাদিন খেলছিস তার কথা ভুলে গেলি!”      
বুবুন দেখল, সত্যি তো! ভারি অন্যায় হয়ে গেছে! ভুলো কাছেই বসেছিল বুবুন তাকে বলল, “সরি ভুলো! ভুল হয়ে গেছে! তোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম!”
ভুলো অবশ্য কিছু মনে করল না। লেজ নেড়ে ওর কাছে এসে চট করে ওর পা-টা চেটে দিয়ে গেল!
সব যখন প্রায় হয়ে গেছে আর একটা প্রশ্ন বাকি তখনই সমস্যাটা শুরু হল! 
“এর পর কী? তাড়াতাড়ি বল। আমাকে ছবি আঁকাটা শেষ করতে হবে তো!” তুতুল তাড়া দিল।   
“এই যে!” 
তুতুল পড়ে বলল, “শেষ প্রশ্ন – তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?” 
বুবুন মাথা চুলকে, একটু ভেবে বলল, “ডাক্তার!”  
তুতুল চোখ উল্টালো, “ধ্যাত কি বোরিং! ডাক্তার হলে স্নেহাশীষ কাকুর মতন দিন রাত হাসপাতালে পড়ে থাকবি! কোন পিকনিক পার্টি কোথাও যেতে পারবি না! সব সময় শুধু রুগী দেখবি আর রুগী দেখবি!”  
বুবুন বলল, “না, না, ডাক্তাররা সবাইকে কেমন ইঞ্জেকশান দেয়! সবাই ওদের ভয় পায়! আমি ডাক্তারই হব!” ইঞ্জেকশানে বুবুনের ভীষন ভয় তাই ওর ধারণা যারা সবাইকে ইঞ্জেকশান দিতে পারে তারাই সর্বশক্তিমান!   
তুতুল তো হেসেই কুটি কুটি, “ইঞ্জেকশান ডাক্তাররা দেবে কেন? ইঞ্জেকশান তো নার্সরা দেয়! কম্পাউন্ডারও দেয় মাঝে মাঝে! তুই কি তাহলে কম্পাউন্ডার বা নার্স হতে চাস? বলে দিচ্ছি দুটোই কিন্তু খুব বোরিং!” 
ইদানিং তুতুলের সব চেয়ে প্রিয় শব্দ হল বোরিং! সব কিছুতেই সেটাকে ব্যবহার করে সে!  
বুবুন দেখল এ তো মহা বিপদ! “তাহলে ক্রিকেট প্লেয়ার?”  
তুতুল ঠোঁট উল্টালো, “ধুর ধুর! তুই মাঠে খেলতে গিয়ে একটা ক্যাচও ধরতে পারিস না, ব্যাটটাও ঠিক করে ধরতে পারিস না আর তুই খেলবি ক্রিকেট! যারা ভাল খেলোয়ার হয় তারা তোর বয়স থেকেই প্রতিভা দেখায়!” 
“তাহলে পাইলট?”  
“না, ওটা একদমই চলবে না! মার প্লেনে চড়াতে কত ভয় জানিস না? মা তোকে কিছুতেই পাইলট হতে দেবে না!”
“হুঁ, তাহলে পুলিশ বা ফায়ারম্যান?” 
তুতুল হি হি করে হাসতে লাগল, “ওই তালপাতার সেপাইয়ের মতন চেহারার পুলিশ বা ফায়ারম্যান হলে আর দেখতে হবে না! ফুঁ দিলে উড়ে যায়, ছুঁইলে পরে মরে-র গল্প শুনিসনি? তুই তো সেই রকম!”  
এমনি করে একে একে ফুটবল প্লেয়ার, রেসিং কার চালানো, স্পাইডারম্যান হওয়া, সিনেমার হিরো হওয়া জাতীয় বুবুনের ভাল লাগা সব কিছুই বাদ চলে গেল!   

রাতে বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে দেখলেন, বুবুন তুতুল ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে! খাটের পাশে পড়ার টেবিলে চার্টটা পড়ে রয়েছে, সুন্দর করে ছবি টবি লাগানো।   
বাবা চার্টটা হাতে নিয়ে বাইরের ঘরে গিয়ে মাকে বললেন, “বাব্বা! ওদের এই বয়স থেকেই সব প্রোজেক্ট ওয়ার্ক করতে হয়! আমাদের সময় বাপু এই সব ছিল না!”
মা বললেন, “এটাকে নিয়ে দুজনে সারা বিকেল ধস্তাধস্তি করেছে!”  
বাবা চার্টটা পড়তে পড়তে শেষ প্রশ্নটাতে এসে অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন! বড় হয়ে কী হবে, প্রশ্নটার উত্তরে বুবুন একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন এঁকেছে আর গোটা গোটা অক্ষরে লিখেছে, ‘সেটা বড় হয়েই ঠিক করব! বড় হয়ে কী হবো তা এখনই বলতে গেলে খুব গোলমাল হচ্ছে!

লেখিকা : অনন্যা দাশ 


Popular Books


Comments

  • Saptadweepa Adhikary

    খুব ভালো লেগেছে।দারুণ!

    Aug 25 2023
  • Sarmishtha Chatterjee

    শেষটা দারুণ। খুব সুন্দর। আজকালকার অবস্থা দারুণ ভাবে ফুটিয়ে উঠেছে।

    Sep 3 2023
  • cBYyjGWuQ

    AZUnPgENSmRwyaDI

    Mar 14 2024
  • cBYyjGWuQ

    AZUnPgENSmRwyaDI

    Mar 14 2024
  • cBYyjGWuQ

    AZUnPgENSmRwyaDI

    Mar 14 2024

Write a Comment