Image-Description
Stories
ঠাঁইনাড়া
Apr 4 2023 Posted by : Admin

'মাম্মা, ঠাঁইনাড়া কাকে বলে?'
'কেন ঋষু?'― প্রশ্নটা করে নিজের সাড়ে ছ'বছরের ছেলের দিকে তাকিয়ে তনিমা বুঝল, প্রশ্নটার উত্তর ও নিজেও জানে। 
কিন্তু সেটা ঋষুকে বোঝানো ওর কম্ম না। 
ঋষির একটা বদভ্যাস হল ও যখনই মন দিয়ে কিছু ভাবে, তখন যেকোনো একটা বুড়ো আঙুল মুখে পুরে দেয়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য সময় হলে ধেড়ে ছেলের এই আনহাইজিনিক হ্যাবিটের জন্য তনিমা দু'ঘা দিয়ে আধঘণ্টা বক্তৃতা দিত বুড়ো আঙুল চোষার কুফলের ওপরে। কিন্তু আজ ঋষুর মুখে ওই 'ঠাঁইনাড়া' শব্দটা ওকে বড়ো নাড়া দিয়ে আনমনা করে দিয়েছে।

ঋষু মন দিয়ে মাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পাক্কা দেড়মিনিট বুড়ো আঙুল চুষেও যখন বকা খেলোনা, বুঝে গেল মায়ের থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাবে না। তখন ও ধীরে ধীরে চলল দিদুনের ঘরের দিকে।

মণিমালা, দেবমাল্যর মা, আপাতত আছেন গেস্টরুমে। ছেলের তৈরি করে দেওয়া প্যাকিং বাক্সের টেম্পোরারি ঠাকুরের আসনের সামনে জপের মালা হাতে নিয়ে বস্তুত চুপ করেই বসেছিলেন। চোখ জানলার বাইরের বাগানের দিকে। হঠাৎ গায়ে ঋষুর হেলান দিয়ে বসা টের পেতেই চটকা ভেঙে হেসে ফেললেন।

তাঁর ছোট ছেলে দেবমাল্যর ছেলে দেবর্ষি, ছোট করে ঋষি ওরফে ঋষু একটি আদত চিন্তাশীল শিশু। ওর গুরুগম্ভীর হাবভাব আর মৌলিক সব প্রশ্নের গুঁতোয় বাড়িশুদ্ধ লোক জেরবার। তার মধ্যে বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়েছে এই লকডাউন। উনি নিজে ছেলের বাড়ি কিছুদিনের জন্য ঘুরতে এসে আটকে পড়েছেন, আর ওদিকে স্কুল বন্ধ, সামনের কুলতলার মাঠে খেলতে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় ঋষুরও প্রশ্নের সমুদ্রে সুনামি উঠছে থেকে থেকে। ওর মস্তিষ্ক অলস থাকতে পারেনা মোটে। যার বেশির ভাগটাই মণিমালাকে সামলাতে হচ্ছে।যদিও মাঝে মাঝে ওনারও মজা লাগে, দেবমাল্যর ছোটবেলা মনে পড়ে যায়। কিন্তু ঋষুর সব প্রশ্নের উত্তর ওনারও জানা নেই।

সকালের দিকে ঋষুর অবশ্য অনলাইন ক্লাস থাকে ঘন্টাদুয়েক। ওই সময়টা হয় ওর বাবা, নয় মা ওর সাথে থাকে। তারপর দেবমাল্য ওরফে দেবু আর ওর বউ তনিমা হাতে হাতে ঘরের কাজ সামলে টুকটাক বেডরুমে ঢুকে যায়। দুজনেরই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলছে। খাটে একজন ল্যাপটপ নিয়ে , ছোট টেবিলে আরেকজন ডেস্কটপে নাক গুঁজে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে ধ্যানভঙ্গ মুনির মত সংসারলোকে নেমে আসে তনিমা। মণিমালার আর ঋষুর তদারক করে। একটু খোঁজ খবর নেয় নিজের মায়ের আর ঋষুর স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যান্টেনা ঘোরায়। আবার ফেরৎ চলে যায় বেডরুমে। এরপর দেবমাল্যর অবতরণ ঘটে। ওও কয়েকটা ফোন টোন করে এদিক ওদিক। দু'মুঠো নাকে মুখে গুঁজে আবার বেডরুমে ঢুকে পড়ে। বেচারাদের অবস্থা দেখে মণিমালার মায়া লাগে। তাই যতটা পারেন ঋষুকে সঙ্গ দেবার চেষ্টা করেন। ফলত ওর প্রশ্নের বলগুলো ওনার দিকেই বেশি ছুটে আসে।

মণিমালা মৃদু হেসে বলেন, 'তুমি আবার বুড়ো আঙুল মুখে দিয়েছ ঋষু? দেখছো না বার বার টিভিতে দেখাচ্ছে হাত স্যানিটাইজ না করে কিছু খেতে নেই, মুখে দিতে নেই...'
'খাওয়া মানে তো মুখে পুরে ভ্যানিশ করে দেওয়া দিদুন। আমি তো এটা ফেরৎ আনছি। দ্যাখো...' ― বলে বুড়ো আঙুল টা মুখ থেকে বার করে ঋষু। ওর অকাট্য যুক্তি শুনে মণিমালা থ। খাওয়া আর চোষার মিল ওকে বোঝাতে যাবেন, এমন সময় ঋষুর প্রশ্ন ধেয়ে আসে, 'ঠাঁইনাড়া কাকে বলে জানো দিদুন? '
'এই কথাটা আবার কে বলল তোমাকে? '
'আমাকে বলেনি। দিম্মা মা-কে বলছিল। মা রান্না করছিল বলে ফোনের স্পীকার অন ছিল। দিম্মা বলছিল, আমি নাকি ঠাঁইনাড়া হয়ে গিয়েছি। এটা নাকি আমার জায়গা নয়। নাউ ইউ টেল মি, হোয়াট ইজ ঠাঁইনাড়া! ইজ ইট কাইন্ড অফ শিলনোড়া ইন কিচেন? ওর বদলে তো মিক্সি এনেছে মাম্মা।'

মণিমালা বিষয়টা জানেন। কিন্তু সেটা ঋষুকে কি করে বোঝান! দেবমাল্য ও তনিমা বিয়ের পর ওনাদের উত্তর কলকাতার যৌথ পরিবারেই ছিলো। তারপর ঋষি এল। কিন্তু একটা সময়ে তনিমার চাকরী করা নিয়ে বাড়ির বড় তিন বউয়ের মধ্যে একটা একটা হাল্কা অসন্তোষ ধুঁইয়ে উঠছিলো। তারা হাবেভাবে তা প্রকাশ করতেও দ্বিধা করতো না। মণিমালার অবশ্য তাদের পড়াশোনা বা চাকরি করা নিয়ে কোন আপত্তি কোনোকালেই ছিলনা। কিন্তু তাঁর বড় তিন ছেলে নিজেরাই বিশাল মাইনের চাকরি করে।বউয়েরা সবাই বেশ অবস্থাপন্ন পরিবারের মেয়ে। তারা বেশ আরামে আয়েষে এত বছর কাটিয়ে দিয়েছে। তাদের পক্ষে নতুন করে লেখাপড়া বা ডিউটি করার ঝক্কি নেবার মানসিকতা নেই। তনিমাকে বোঝা ওদের পক্ষে সম্ভব না। দেবমাল্য একটা ছোট প্রাইভেট ফার্মে কাজ করে। ওদের প্রেমজ বিবাহ। তনিমার বিধবা মা ওকে একা হাতেই প্রায় মানুষ করেছেন। তাই তনিমার চিন্তা ভাবনা বড় তিন বউয়ের মত নয়। ও বিয়ের পর নিজের সংসার এবং মায়ের কিছুটা দায়িত্ব নেবার জন্য খুবই মন দিয়ে নিজের চাকরিটাও করে। মেয়েটিকে বুদ্ধিমতী মণিমালা খুব ভালোবাসলেও সেটার প্রকাশ ঘটলে ওকেই অন্যদের বিষ নজরে পড়তে হবে, ভেবে উনি নিজেই দেবমাল্যকে বলেছিলেন তনিমার অফিসের কাছে শিফট করে যেতে। দেবমাল্য মাকে চেনে। তাই অচিরেই এয়ারপোর্টের দিকে এই ছোট বাড়িটায় উঠে চলে আসে যেনতেন করে। ও বুঝেছিলো মা কিছু একটা সাংসারিক জটিলতা এড়াতেই এই কথা বলেছিলেন। আর বাড়িটা পেয়েও গেছে সস্তায়। বাড়ির পিছনেই  বিশাল সবুজে ঘেরা আমবাগান। অবশ্য সেটা ওদের মানুষ সমান বাউন্ডারি ওয়ালের ওপারে। অন্যের মালিকানায়। কিন্তু দেখে চোখ জুড়োতে আটকাচ্ছে কে!

মণিমালার যুক্তিটা বোঝেননি সুরমা। তনিমা-র মা। স্বামীর মৃত্যুর পর একা হাতে পোস্ট অফিসের চাকরি, মেয়ে, সংসার সব সামলে ওনার ধারনা হয়েছে যৌথ পরিবার হল সব থেকে ভালো ব্যবস্থা যেখানে ওনার মেয়ে পরিবার পরিজনের মধ্যে ভালো থাকবে, নাতি সবার আদরযত্ন পাবে। এই কুলতলায় শিফট হওয়াটা ওনার কাছে নাতির ঠাঁইনাড়া হওয়া। এতে নাকি ওর শৈশব বিঘ্নিত হচ্ছে। ও বাড়ির অন্য গুরুজনদের ভালোবাসা পাচ্ছেনা। উনি মণিমালাকে সেকথা বোঝানোরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে এখন প্রায়শই মেয়েকে কথা শোনান। তারই খানিক ঋষু শুনে ফেলে থাকবে।

কিন্তু এত কিছু ঋষুকে বোঝানো মণিমালার পক্ষে সম্ভব না। এদিকে উত্তরও দিতে হবে। নইলে এ যা ছেলে, হাতের বুড়ো আঙুল ছেড়ে না পায়ের বুড়ো আঙুল চোষা শুরু করে...!!! হঠাৎ বাগানের দিকে চোখ যেতেই মণিমালার মাথায় একটা আইডিয়া এল।

সামনের বাগানে ওনাদের বাউন্ডারি ওয়ালের ঠিক পিছনে বিশাল বড় বড় কচুপাতার নীচে কিছুদিন হল একটি মা শেয়াল এসে চারটি ছোট্ট নবজাতককে নিয়ে বাসা বেঁধেছে। আসলে তো জায়গাটা নামেই বাগান। কার্যতঃ ওটা জঙ্গল। একে তো শরিকি জমি, তার হাজার মামলা, বিবাদ, তায় আবার ভূতের আবাস হবার বদনাম। কেউ ন্যূনতম সাফ সাফাই করেনা অনেক বছর। স্থানীয় মানুষ ওর নাম দিয়েছে মামদোবাগান এবং জায়গাটাকে এড়িয়েই চলে। তাই মা শেয়াল এটাকেই নিরাপদ স্থান মনে করেছে। বাচ্চাগুলোকে ঋষু দেখেছে, এবং ছাদ থেকে ওদের জন্য মাংসের হাড়, বিস্কুট, হাতের কাছে যা খাবার পায়, টুকটাক ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয়, এটা মণিমালা জানেন। তাই আপাতত বিপদ কাটাতে নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, 'দ্যাখো ঋষুন, ওই যে তোমার বন্ধু শেয়াল, ওরা হল একরকমের ঠাঁইনাড়া।ওরা তো তোমার বন্ধু। বাকিটা বরং ওদেরকেই জিগেস করোনা কেন।' বলেই হেসে ফেললেন।

'হুমমমম'...বলে আরো গম্ভীর হয়ে আঙুল চুষতে চুষতে ঋষি ছাদের পানে হাঁটা দিলো। ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে মণিমালার একটা মিশ্র অনুভূতি হল।

কাজটা উনি ঠিক করেছেন তো!

*******

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আগে এই সময়টায় ঋষি কুলতলার মাঠে একটু খেলে এসে কার্টুন দেখতে দেখতে কিছু খেতো। তারপর ওর ম্যাম আসতেন পড়াতে। এখন তো ম্যামও আসেননা। এখন এই সময়টা মা বাপিও ব্যস্ত থাকে। দিদুন ছাদে উঠতে পারেনা হাঁটুর ব্যথায়। তাই ঋষি এই সময়টা মামদো আঙ্কলের সাথে একটু মন খুলে আলোচনা করে। অবশ্য কথাটা কাউকে বলা স্ট্রিক্টলি মানা আছে মামদো আঙ্কলের। তাহলে আর নাকি আঙ্কল আসতে পারবে না। শেয়ালছানাগুলোকে দেখিয়ে আঙ্কলই ওকে বলেছিলো ওদের কিছু খেতে দিতে। ও কথা শুনেছে দেখে আঙ্কল ওর ওপর খুব খুশি। বলেছে ওকে অনেকগুলো ম্যাজিক শিখিয়ে দেবে। আঙ্কল তো ম্যাজিশিয়ান ছিলো। এখন এই বাগানেই থাকে। সন্ধ্যার দিকে ছাদে এসে ঋষুর প্রশ্নের বেশ ভালো ভালো উত্তর দিয়ে যায়। ও না বুঝলে ওকে বুঝিয়েও দেয়। এই ঠাঁইনাড়া ব্যপারটা আঙ্কলই বলতে পারবে...

*****

'ঠাঁই হল একটা জায়গা ঋষি। যে যেখানে থাকে, সেটা তার ঠাঁই। যেমন ধরো এই বাড়িটা তোমার ঠাঁই। এই বাগানটা আমার। কাল যদি কেউ তোমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে, বা আমাকে এই বাগান থেকে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা হবো ঠাঁইনাড়া। বুঝলে?' -ঋষিকে দুলে দুলে বোঝাচ্ছিলেন মৃত ওসমান শেখের আত্মা। স্থানীয়রা ওঁকেই বলে মামদোভূত। জীবৎকালে নামকরা ম্যাজিশিয়ান ছিলেন। পারিবারিক এই বাগানটি ওনার খুব প্রিয় ছিল। এখানকার গাছগাছালি, পাখি, কাঠবিড়ালি...সবই ওনার প্রাণ ছিল। যদিও অন্য শরিকরা ওনার এই বাগানপ্রীতি ভালো ভাবে নেয়নি। একদিন এই বাগানেই ভোরবেলা ওনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। হত্যা। কিন্তু তার কিনারা হয়নি আজও। রটনা বাগানের মামদোভূত ওনাকে হত্যা করেছে। মৃত্যুর পরেও ওসমান লোভী শরিকদের থেকে বাগানটিকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন বিগত এক দশক ধরে। নির্বিবাদী মানুষটা প্রেত হয়ে সবার ভয়ের কারণ হয়েছেন। একমাত্র এই ছোট্ট ছেলেটাই একদিন ভরসন্ধ্যায় সবার অলক্ষ্যে ছাদে এসে তাঁর অর্ধবায়বীয় অবয়বের দিকে হাত বাড়িয়ে অনাবিল হেসে বলেছিল 'হ্যালো আঙ্কল।' সেদিন থেকে বড় মায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন নতুন করে। ও ডাকলে তাঁকে আসতেই হয়।

'কিন্তু দিদুন কেন বলল ওই শেয়ালরা ঠাঁইনাড়া?' পরবর্তী প্রশ্নবাণ। 
'বাচ্চা, উনি ঠিকই বলেছেন। আগে এখানে ওরা তো ছিলনা। ওরা ছিল ওদের জঙ্গলে। সে জঙ্গল বেদখল হলো। ওরা ঠাঁইনাড়া হল। তাই তো আমার বাগানে এলো। ইনসান খুব লালচি বাচ্চা। শুধু একা ভালো থাকতে চায়...! ' আবছা মুখ আবছাতর দুঃখে ঢাকে ওসমান শেখের। 
'বাট আয়্যাম নট লালচি। তুমি বললে আমার সব চকলেট আমি ওদের দিয়ে দেব আঙ্কল। তুমি একদম মন খারাপ কোরোনা।'
জীবিত থাকলে এই ছোট্ট ফরিশতাকে হয়তো জড়িয়ে ধরতেন ওসমান। কিন্তু তিনি নিরুপায়। তাই নিজেকে সংযত করে বললেন 'ঘুঘু পাখি দেখো বাচ্চা... '
'কই? কোথায়?' লাফিয়ে ওঠে ঋষু। ও 'ঘুঘু চরা'-কথাটা শুনেছে কোথাও। 
'ওই যে...আমডালে কাঠবিড়ালি...দেখতে পেলে? ওর ডানদিকে আস্তে আস্তে মাথাটা ঘোরাও...দেখো...পাতার ফাঁকে...'
'ইয়েস...ঘুঘুপাখি। ডাভ। তোমার বাগানে ঘুঘু চরছে আঙ্কল, কি মজা! কী মজা!'
ঋষির কথায় ওসমান হাসবেন না কাঁদবেন খানিকক্ষণ ঠিক করতে পারলেননা। তারপর হেসেই ফেললেন। 
'বাচ্চা, ঘুঘু চরার মতলব সেখানে কেউ আসেনা। বিরান জায়গা। তবে এখন এ পাখি এখন নতুন হওয়া ফ্ল্যাটের জানলা দিয়েও ঢুকে যায়। ওও ঠাঁইনাড়া কিনা।' দীর্ঘশ্বাস পড়ে অর্ধস্বচ্ছ অবয়বের। বা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলার ভঙ্গিটুকু করেন অভ্যাসের বশে।

'ওও ঠাঁইনাড়া? ওরও নিজের ঘর, জঙ্গল, বাগান সব লালচি মানুষ কেড়ে নিয়েছে?' ঋষুর চোখে রাগ। 
'হ্যাঁ রে বাচ্চা। ওরও তো বিবি বাচ্চা আছে। ও কোথায় যায়!'
'আচ্ছা আঙ্কল...' আবার বুড়ো আঙুল মুখে...।
'আবার মুখে আঙুল? এত বারণ করি। তাও শোনো না। তুমি একদম বদমাশ বাচ্চা। আর কখনো আসব না আমি। এই আমি চললাম।'― বলে উধাও হন ওসমান। পিছনে সিঁড়ির আলো জ্বলে ওঠে।

'এই বাঁদর, ভর-সন্ধ্যাবেলা মশার কামড় খেয়ে এখানে কী করছিস তুই? আমি খুঁজে মরছি।' বলে তনিমা। 
'শেয়াল ঠাঁইনাড়া, ঘুঘুও ঠাঁইনাড়া, ঋষুও ঠাঁইনাড়া। বুঝলে মাম্মা?'
তনিমা এক মুহুর্ত ছেলের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে বলে 'খুব বুঝেছি। এবার নীচে চল। হরলিক্স খা। নইলে আমি শুনবো তোর দিম্মার মুখনাড়া।'

'কাল আবার মামদো আঙ্কলকে জিগেস করবো হোয়াট ইজ মুখনাড়া। ইজ ইট আর কাইন্ড অফ রাইম অর হোয়াট!'-জামার বুকে চোষা বুড়ো-আঙুলটা মুছতে মুছতে ভাবতে ভাবতে মায়ের সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে ঋষি।

রাতে খেতে বসে কথাটা বলে দেবমাল্য ― 'পিছনের বাগানের শরিকি বিবাদ এবার বোধহয় মিটে যাবে, জানো। আজ বাজারে শুনলাম। লকডাউনের জন্য বাইরের দেশে থাকা অনেক শরিক আসতে পারছেনা বলে আটকে আছে। আপোষে মিটিয়ে শুনছি বড় কোনো প্রোমোটারকে দিয়ে দেবে। বেশ কয়েক কোটি টাকার লেনদেন।'

'মানে একটু যা আলো হাওয়া আসত,গেল।' বলে তনিমা। 
দেবমাল্য বলে 'আরে না না। তা কেন হবে! যা কনস্ট্রাকশন হবে, রুল মেনেই হবে। স্পেস ছাড়বে। আর যা জায়গা আছে, তাতে তো আর একটা বিল্ডিং হবেনা। পুরো কমপ্লেক্স হবে। বলা যায়না। আমাদেরও অফার দিতে পারে ফ্ল্যাটের জন্য। আমাদের জমিটা জুড়লে তো এদিকের রাস্তাটাও পেয়ে যাবে প্লটে।'
'ছাড়ো তো। ওসব কালনেমির লঙ্কাভাগ করতে হবে না। যখন হবে, দেখা যাবে।' বলে তনিমা।

এতক্ষণ মন দিয়ে, চোখ দিয়ে একবার মা, আরেকবার বাবার দিকে দেখছিলো ঋষি। এবার আর থাকতে না পেরে বলে ওঠে 'বা রে, আমরা সবাই ফ্ল্যাটে থাকলে বাগানটা কোথায় থাকবে? কাঠবিড়ালি, ঘুঘুপাখি, শেয়ালের ছানারা কোথায় থাকবে? ওদেরকে ঠাঁইনাড়া কেন করবে পচা লোকগুলো?' ওর চোখে জল। প্লেটটা ঠেলে দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে দিদুনের ঘরের দিকে হাঁটা দেয় ছোট্ট পায়ে।

এই কথাটা এতক্ষণ দেবমাল্য বা তনিমা ভাবেনি। ওদেরও মনে হয় ঋষির এই ফাঁকা সময়টুকুতে বাগানটা অনেকটা জায়গা জুড়ে শেকড় গেড়েছে ওর মনে। ওটা না থাকলে বড় আঘাত পাবে। কিন্তু কিই বা করার আছে! পরিস্থিতি তো ওদের হাতে নেই। অন্যের জায়গা। তারা যা ইচ্ছা, তাইই করতে পারে।ওদেরও খাবার ইচ্ছেটা মরে যায়।

কিছুক্ষণ পরে মণিমালার আগমন। ওনার খাবার একঘন্টা পর ওষুধ খাবার থাকে বলে আগেই খেয়ে নেন। কিন্তু জেগে থাকেন। আজ ঘর থেকে আসার কারণ পিছনে আঁচল ধরা ঋষু। তনিমা বোঝে আবদার আছে। তাই অ্যাপেলেট কোর্টকে সাথে করে ধরে এনেছে যাতে সে বা দেবমাল্য মানা না করতে পারে।

মণিমালা বলেন 'আজ ঋষুন ওর দিদুনের কাছে শোবে বলছে। তোরা শুয়ে পড়।' তনিমা দেবমাল্য মুখ তাকাতাকি করে। ঋষু ততক্ষণে দিদুনের পিছনে চলে গেছে। ওরা ফিক করে হেসেই গম্ভীর হয়ে যায়। দেবমাল্য গলাটা একটু কেশে সাফ করে বলে 'শোবে শোও।কিন্তু দিদুনকে জ্বালাতন করবেনা।' এবার ঋষু গুটিগুটি বেরিয়ে আসে একগাল হেসে। এত সহজে কাজ হবে ওর মনেই হয়নি। মঅঅঅস্ত করে ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানায় বাবার শর্তে।

******

ঋষি আর মণিমালা দেবমাল্য, তনিমা কে গুডনাইট করে ঘরের লাইট অফ করে বসে আছে প্রায় এক ঘন্টা। অপেক্ষা করছে পাশের ঘরে লাইট অফ হয়ে যাবার। মণিমালার বেশ মজা লাগছে নাতির সাথে ছোট হয়ে এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হতে। যদিও নাতির কথার মানে মাথা, উনি কিছুই বোঝেননি, এটুকু বুঝেছেন ঋষির ওনার ওপর অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসটুকুর মর্যাদা রাখতে আজ ঋষির কোন এক 'মামদো আঙ্কল'-এর অপেক্ষা করছেন দুজনে। অথচ বৃদ্ধা মণিমালা আশৈশব ডানপিটে আর সাহসী। ভূত প্রেতে তাঁর কোনোকালে ছিটেফোঁটা বিশ্বাস নেই। তাঁর পরলোকগত স্বামী বরং একটু ভীতু মানুষ ছিলেন। কিন্তু আজ বাড়ির পিছনের বাগানে ফ্ল্যাট উঠবে শুনে তাঁর গুরুগম্ভীর, চিন্তাশীল নাতিটি যেভাবে মুষড়ে পড়েছে, তাতে তার ছেলেমানুষির তালে তাল দিয়ে তিনি একটু মন রাখার চেষ্টা করছেন ওর।

খুট করে আওয়াজ হল পাশের ঘরে। আর অন্ধকার বাগানে পাশের ঘর থেকে পড়া আলোর চৌখুপ্পিটা নিভে গেল। বুঝলেন দেবমাল্য, তনিমা শুয়ে পড়লো। ঋষি, মণিমালা আরো মিনিট পনেরো কুড়ি অপেক্ষা করলেন। তারপর দুটো দুরকম নাক ডাকার সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসতেই মণিমালা নাতিকে বললেন 'নাও, ঋষুন। কাকে ডাকবে, ডাকো।' বলেই জিরো পাওয়ারের বাল্বের আলোতেই ঋষির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

ঋষি খাটের উপর পা রেখে উঠে গেল জানলার গ্রিল ধরে, তারপর সিলের ওপর দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে ডাকতে লাগল 'মামদো আঙ্কল, মামদো আঙ্কল এস প্লীজ। তোমার বাগান ঠাঁইনাড়া করা নিয়ে কথা আছে।' দু এক একবার কচি গলায় ডাকার পরে মণিমালার শরীরে কাঁটা দিইয়ে ঘরের তাপমাত্রার পারদ কয়েক ডিগ্রি যেন নেমে গেল। কিন্তু ঋষি উজ্জ্বল মুখে জানলা থেকে ঝুলতে ঝুলতে বলল 'দিদুন, মামদো আঙ্কল এসেছে।' মণিমালার একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো শরীরে। একটা অদ্ভুত অনুভূতি। বিশ্বাস না করলেও খাট থেকে নেমে উনি জানলার ধারে দাঁড়ালেন। বাগানের দিকে তাকাতে নিকষ কালো অন্ধকার আর আকাশপানের আঁধার আলোয় কয়েকটা গাছের মাথা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলেননা। ঋষির দিকে তাকাতে দেখলেন ও বেশ হাসি মুখ করে একবার ওনার দিকে, একবার জানলার ঠিক বাইরে দেখছে। ঋষিকে বকতে যাবেন,ওনার কানের কাছে একটা ঠান্ডা হাওয়া বলে উঠলো 'জী, আমি ওসমান শেখ...।"
মণিমালা ছিটকে গেলেন ঘরের মধ্যে। এবার আবার তাঁর কানের কাছে, ঘরের মধ্যে থেকেই আওয়াজটা এলো, 'ভয় পাবেননা ম্যাডাম। আমি বাচ্চার মামদো আঙ্কল। ম্যাজিশিয়ান ওসমান শেখ।'

মণিমালা এই নামটার সাথে পরিচিত। এই বাড়িটা মার্কেট প্রাইসের থেকে এতটা কমে কেন পাওয়া যাচ্ছে সেটা নিয়ে দেবমাল্যকে খোঁজ নিতে বলেছিলেন। তখনই বাড়ির পিছনের বাগানে মামদো ভূতের হাতে ম্যাজিশিয়ান ওসমান শেখের খুন হবার গুজবটা কানে এসেছিলো। কিন্তু ভূতে বিশ্বাস না ওনার আছে, না দেবমাল্য বা তনিমার। তাই ওসবে কান না দিয়ে উনি দেবমাল্যকে বলেছিলেন বাড়িটা নিয়ে নিতে। এই কথাগুলো ওনার মনে আসতেই আবার কানের কাছে আবার সেই কণ্ঠ, 'না মুমকিন ম্যাডাম। আই অ্যাম ম্যাজিশিয়ান ওসমান শেখ। আই অ্যাম দ্যা মার্ডারড ম্যাজিশিয়ান। আমিই এই বাগানের মামদো ভূত। আমি নিজে কী করে আমাকে মার্ডার করব?!' বলে হো হো করে হেসে ওঠে সেই কণ্ঠের অদৃশ্য অধিকারী। মণিমালা দেখলেন ঋষি জানলা থেকে নেমে খাটের উপর গুছিয়ে বসে একটি বুড়ো আঙুলের দিকে করুণ ভাবে তাকাচ্ছে একবার, আর একবার ঘরের মাঝে রাখা চেয়ারের দিকে তাকাচ্ছে। উনি নিজেকে সামলে নিলেন। বুঝলেন আগত অশরীরী ওই চেয়ারে উপবিষ্ট বা ওর আশে পাশেই রয়েছেন। ওনার পা অল্প কাঁপছিল। সেটা ঢাকার জন্য খাটে বসে পড়লেন। অশরীরী যে ওনার মনের কথা বুঝতে পারছেন, এতেই ওনার অস্বস্তি যেন আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছিলো। মনে জোর এনে গলা খাঁকরে নিয়ে বললেন 'ইয়ে, মানে ঋষুন আপনাকে দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু... '
'পাচ্ছেন না তো? ম্যাডাম, আপনি তো মানেনই না যে আমি আছি। আপনাকে দেখা দেওয়াতে আমার খুব তকলিফ হবে। শুনতে পাচ্ছেন, এটাই কাফি।'

'মামদো আঙ্কল', এবার বলে ঋষি, 'তোমার বাগানে ফ্ল্যাট বানাবে বলছে। বাবা শুনেছে বাজারে। সবাই ঠাঁইনাড়া হয়ে যাবে তো। কিছু করো। সবাইকে ভয় দেখাও দরকার হলে। ওই সেই দিম্মা যেমন গল্প বলে, মূলোর মত দাঁত, কুলোর মত কান আর ভাঁটার মত চোখ...আছে তো তোমার?'
'এ দিয়ে বেশিদিন হবেনা বাচ্চা। এ বিপদ তোমার মামদো আঙ্কলের ভয় দেখানোতে চিরকালের জন্য কাটবেনা।ওরা অনেক বেশি খারাপ লোক।' বিষন্ন কন্ঠে বললেন ওসমান। 
এবার মণিমালা মুখ খুললেন, যদিও একটা খালি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ওনার অস্বস্তি হচ্ছিল, 'ওসমান ভাই, আপনাকে কি ওদেরই কেউ...?'
'জী ম্যাডাম। ওরাই। আমার কাছে অনেক পুরনো দলিল আছে এই বাগানের। আসল। এর কপি ওদের কারো কাছে নেই। আমাকে অনেকবার বলেছিল ওটা দিয়ে দিতে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে কপি বার করার অনেক হাঙ্গামা। আমি এই বাগানটা নষ্ট করতে চাইনি। চাই কি সব শরিকের অংশ মার্কেট প্রাইসে কিনেও নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা চাইছিল একেবারে কোটিপতি হতে। তাই আমাকেই থ্রেট করতে এসেছিল। কিন্তু কথা কাটাকাটিতে মাথা গরম করে...'
একবারে এতগুলো কথা বলে যেন ক্লান্ত হয়ে থামল অশরীরী।

'কিন্তু আঙ্কল, এখন সব পচা লোকেরা এক হয়ে বাগানে ফ্ল্যাট বানালে আমি বসন্তবৌরি, ফিঙে, মাছরাঙা, বুলবুলি চিনব কি করে? তুমি তো কসমস খেয়ে বলেছিলে চেনাবে আমাকে। আমি তো কাক, শালিখ আর চড়ুই ছাড়া আর কাউকে চিনিনা', ঠোঁট ফোলায় ঋষি, 'তুমি ম্যাজিক করে পচা লোকদের ভ্যানিশ করে দাও না কেন? এখানে ফ্ল্যাট হলে অত ছোট্ট শেয়ালছানারা কোথায় যাবে?' ঋষির চোখে টলটলে জল। 
অশরীরীর মুখে বোধহয় এক চিলতে করুণ হাসি, অন্ততঃ মণিমালা তেমনটাই কল্পনা করলেন। বললেন 'ভাই, আপনি কি কিছুই করতে পারেন না? এতটা সবুজ ধ্বংস হয়ে যাবে, এটা তো ঠিক নয়।'
'আমার কাছে রাখা দলিল যেখানে আছে তা ওরা কোনোদিন খুঁজে পাবে না। আর যতদিন এই বাগানে আমার রুহ্ আটকে আছে ম্যাডাম, এখানে কোনো ফ্ল্যাট উঠবে না। আমি উঠতে দেব না। তার জন্য যত খারাপ হতে হয়, আমি হব। লেকিন আমার কিছু লিমিট আছে। আমার ওয়াক্ত ফুরিয়ে আসছে। আর কত দিন ওদের আটকে রাখতে পারব জানিনা।'

'আমি আটকে রাখব।' বলে ছোট্ট ঋষি।'তুমি আমার বড় হওয়া অবধি ওয়েট করো আঙ্কল। আমি সবাইকে বোঝাব যে পাখি, কাঠবিড়ালি, শেয়ালছানারা...এদের ঠাঁইনাড়া করতে নেই।' বেশ বুঝদারের মত বলে সে।

'কিন্তু বাচ্চা, তুমি তো নিজেকেই আঙুল চোষা থেকে আটকাতে পারো না...তুমি কি পারবে অন্যদের আটকাতে?' মৃদু রসিকতা অশরীরী কণ্ঠে। 
'আমিও কসমস খাচ্ছি। আর আঙুল চুষবোনা। তুমি শুধু আমার সাথে থাকো। আর বাগান ঠাঁইনাড়া হতে দিওনা। ম্যাজিক শেখাও আমাকে আর বাগানে যারা যারা আছে সবাইকে চিনিয়ে দাও। বাকি বড় হয়ে আমি বুঝে নেব। সব পচা লোককে ভ্যানিশ করার ম্যাজিক শেখাবে। আর আমি রোজ প্রে করব যাতে লকডাউন আরও বেড়ে যায়। তাহলে তো বিদেশে যে পচা লোকেরা আছে, ওরা আসতেই পারবেনা, তাই না!'― বোদ্ধা কণ্ঠ ঋষির।

জানলার বাইরে থেকে পাখির কিচিরমিচির ভেসে আসে...কথায় কথায় রাত বোধহয় ফুরিয়ে এলো। মণিমালার এতক্ষণে মনে হল ওই চেয়ারটার ওপরে হাল্কা অর্ধস্বচ্ছ একটা বায়বীয় অবয়ব যেন ভাসছে। কিন্তু কি আশ্চর্য! ওনার আদৌ ভয় লাগছে না। বরং একটা অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে এমন একজনের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে যে জীবিত, মৃত, উভয় অবস্থাতেই এত সুন্দর মনের।

'এতক্ষণে ম্যাডামের ইয়াকীন হলতো যে আমি আছি!?...আমি থাকব ম্যাডাম। বাচ্চা আমাকে আজ আমাকে অনেক জোর দিল। ও যতদিন আমাকে ডাকবে, আমি আসবো। আর ততদিন এই বাগান আমি খারাপ করতে দেব না কাউকে।এবার আমাকে যেতে হবে...আমি আবার সন্ধ্যায় আসবো বাচ্চা...' অর্ধস্বচ্ছ মূর্তি ঋষি আর মণিমালার চোখের সামনে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে যায় হাওয়ায়।

******

এতক্ষণ যেন কোনো ঘোরের মধ্যে ছিলেন মণিমালা। ঋষি কিন্তু শুরু থেকেই স্বাভাবিক। শুধু এবার ওর মস্ত মস্ত হাই উঠছে। ঘড়িতে দেখলেন মণিমালা।পৌনে চারটে। ঋষির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে ওর গালে একটা হামি দিয়ে বললেন 'এবার শুয়ে পড় ঋষুন। উঠতে দেরি হলে তোমার মা কিন্তু  টের পেয়ে যাবে তোমার আঙ্কলের কথা। সেটা কি ভালো হবে? তারপর বাগান দেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বা ওরা তোমার মামদো আঙ্কলকে তাড়িয়েও দিতে পারে।'

ঋষি তড়িঘড়ি পাতলা চাদরের নীচে ঢুকে পড়ে বলে, 'না না। তাহলে তো পচা লোকেরা বাগান আর বাগানের সবাইকে ঠাঁইনাড়া করে দেবে। মামদো আঙ্কলের কথাটা ওনলি অ্যামাং ফ্রেন্ডস থাকবে। ঋষুন, দিদুন আর মামদো আঙ্কল নিজে, কেমন...।' মণিমালা মৃদু হেসে ওকে আশ্বাস দেন।

তাড়াতাড়ি করে চোখ টিপে শুয়ে পড়ে ঋষি। মনে মনে ভাবে ওকে লক্ষ্মী ছেলে হতে হবে। বড়দের কথা শুনতে হবে। তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে। তবেই না ও মামদো আঙ্কলের বাগানটা বাঁচাতে পারবে। সবার ঠাঁইনাড়া হওয়া আটকাতে পারবে...।

সমাপ্ত

লেখক : মুম্মা মিত্র
 


Popular Books


Comments

  • বিজয় লক্ষ্মী মুখার্জী

    খুব সুন্দর। ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম যেন

    Apr 4 2023
  • Sarmishtha Chatterjee

    দারুণ সুন্দর

    Sep 6 2023
  • AdXTkGBHwlQ

    dUcVQmihIvBZP

    Feb 7 2024
  • AdXTkGBHwlQ

    dUcVQmihIvBZP

    Feb 7 2024
  • AdXTkGBHwlQ

    dUcVQmihIvBZP

    Feb 7 2024
  • SRcCqIsMV

    fJKgRBdDFya

    Mar 14 2024
  • SRcCqIsMV

    fJKgRBdDFya

    Mar 14 2024
  • SRcCqIsMV

    fJKgRBdDFya

    Mar 14 2024

Write a Comment