Image-Description
Stories
টুনি ও টুনটুনি
Jul 18 2023 Posted by : montajpublishing

        হঠাত্‍ই  ফুড়ুত্‍ ফুড়ুত্‍ করে উড়তে উড়তে টুনটুনির বাচ্চাটা ঢুকে পড়েছিল টুনিদের বাগানে। ঠিক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। নতুন উড়তে শিখেছে কিনা তাই; সঙ্গে আবার আর একটা টুনটুনি। একটু যেন বড় আর রংটাও বেশ ঘন । নিশ্চয় বাচ্চা টুনটুনিটার মা - টুনি ভাবল। মা না হলে সব সময় বাচ্চাটার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেবে কেন! ওর মনে হল - উড়তে শেখাচ্ছে বাচ্চাটাকে।
          ওদের মালিটা বাগানের ঠিক মাঝখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে শাকের বীজ ফেলেছে।
একদল চড়াই এসে রোজ বীজগুলো খুঁটে খাওয়ার চেষ্টা করে। যতবার মালিটা তাড়ায়, একটু পরেই আবার ঘুরে আসে। মালিটার খুব রাগ তাই  চড়াইগুলোর ওপর।
         একদিন সারাটা সকাল বাগানের কোনো কাজ না করে  নারকেল ঝাঁটার কাঠি আর মায়ের সেলাই করার সুতো দিয়ে বীজ ফেলার জায়গাটার ওপর জালের মত করে ঘিরেছে মালি । এখন পাখিগুলো এলেও আর বীজ খেতে পারে না। তবু পাখিগুলোর ওপর মালির রাগ যায় না কিছুতেই ।
         চড়াইগুলোর তবু রোজ একবার অন্তত আসা চাই । জালটার আশে পাশে ঘোরাঘুরি করে। নিজেদের মধ্যে কিচিরমিচির করে কী যেন সব বলাবলি করে আবার উড়ে চলে যায়। ভারী চালাক ওরা, কখনও জালটার ওপরে পা রাখে না।
         কখনও আবার চড়াইগুলো দল বেঁধে উড়ে  এসে দেয়ালের ওপর বসে। মালির পাতা জালটার দিকে তাকিয়ে, এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। নিজেদের মধ্যে কী যেন সব বলাবলি করে। মালিটা দূর থেকে এসব লক্ষ্য করে আর পাখিগুলোকে বুড়ো আঙুল তুলে কাঁচকলা দেখায়, 'আয়, এবারে কী করে বীজগুলো খাবি দেখি, কেমন জব্দ।'
       পাখিগুলো মালিকে পাত্তা না দিয়ে দেয়ালে বসে কিচিরমিচির করে। খানিকক্ষণ জালটাকে দেখে  উড়ে চলে যায়, সেদিন আর আসেনা। 
         জানলার ধারে পড়তে বসে টুনি সব লক্ষ্য করে। সেদিন বাচ্চা টুনটুনিটা উড়তে উড়তে হঠাত্‍ জালের কাছে এসে কী করে যেন সুতোর জালে পা জড়িয়ে ফেলল। টুনি আপশোস করল, 
'ইস কী বোকা পাখিটা!'
         আসলে একেবারেই  বাচ্চা কিনা। এখনও পালকের রঙটা পর্যন্ত ঘন হয়নি। নড়বড়ে দুটো ছোটো ছোটো পাখা নিয়ে ওই রকম উড়তে গেলেই হ'ল নাকি। নাও বোঝ এবার ঠ্যালা। ডানার ঝটপটানিতে সুতো ছিঁড়ে আরো বেশি জড়িয়ে গেল গায়ে পায়ে। যত ডানা ঝাপটায় তত সুতো জড়িয়ে যায়। শেষটাতে ভালো করে আর নড়তেও পারছিল না বেচারি।
         টুনি জানলার পাশে পড়তে বসে এসব দেখছিল আর ভাবছিল - উঠে গিয়ে পাখিটার ডানা আর পাখা থেকে সুতোর জট ছাড়িয়ে দেবে।
      পড়ার আওয়াজ না পেয়ে রান্নাঘর থেকে মা এসে ধমক দিল, 'এই টুনি, জানলা দিয়ে কী দেখছিস রে পড়ার সময়; প্রজাপতি না ফড়িং?'
         জানলা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল টুনি, 'কিছু না  মা।'
      মা রান্নাঘরে ফিরে যেতেই টুনি আবার জানলার বাইরে চোখ রাখল - পাখির বাচ্চাটা
এখনও ছটফট করছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে গা থেকে সুতোর জট ছাড়ানোর। কিন্তু পারছে না।
মা- টুনটুনিটা এসে দাঁড়িয়েছে জালটার পাশেই আর একটানা কিচিরমিচির করেই চলেছে। নিশ্চয় গা থেকে জাল ছাড়ানোর বুদ্ধিই দিচ্ছে। 
         হঠাত্‍ মালিটা পাখিটাকে জালে আটকে গেছে দেখে ছুটে এল আর ধরে ফেলল পাখির বাচ্চাটাকে । মালিটার হাতে পাখিটা ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। চোখে নিষ্ঠুর চাউনি মালিটার। মা টুনটুনিটা মালিটার মাথার ওপর ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার আর কিচিরমিচির করে কী যেন বলার চেষ্টা করছে। মালিটা নিজের মনেই বলে উঠল, 'কালই একটা খাঁচা কিনে আনব। আজকের রাতটা ঝুড়ি চাপা দিয়ে রাখলেই হবে।'
         টুনির খুব কষ্ট হচ্ছে পাখিটার জন্য। বুকটা কেমন যেন মোচড় দিচ্ছে। জানলার কাছে মুখটা এনে চেচিয়ে উঠল টুনি, ওকে ছেড়ে দাও মালি কাকু। দেখছ না কেমন ছটফট করছে ওর মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য!' 
         পাখিটাকে হাতে আরো চেপে ধরল মালিটা,'ছাড়ব না, খাঁচাতে রাখব আমি পাখিটাকে।'
         টুনি লক্ষ্য করল - ধরা না পড়েও মা - পাখিটা ছটফট করছে। 'আহারে বেচারা' বলে উঠে সে আবার চিত্‍কার করল, 'পাখিটাকে ছেড়ে দাও কাকু। না হলে ভালো হবে না কিন্তু!' 
         টুনির কথায় পাত্তা না দিয়ে হ্যা হ্যা করে হাসতে লাগল মালিটা, 'পড়া না করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছ  - মাকে বলে আসব কি?' 
      চিন্তিত টুনি চুপ করে গেল। হঠাত্‍ সামনের আলমারিতে চোখ পড়ে যেতেই মাথাতে একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে রথের মেলাতে কেনা রবারের সাপটা বের করে জামার ভেতর লুকিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
       মালিটা তখন পাখি হাতে আনন্দে মত্ত একেবারে। আপন মনে গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে হেঁটে যাচ্ছে বাগানের রাস্তা ধরে ঘরের দিকে, হয়ত পাখিটাকে ঝুড়ি ঢাকা দিয়ে রাখার জন্য।
      টুনি নিঃশব্দে মালিটার কাছাকাছি এসে, পেছন থেকে সাপটা মালিটার পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়ে চেচিয়ে উঠল, 'তোমার পায়ের কাছে সাপ গো কাকু , সা - আ - প! '
          'কোথায় রে?' বলে মালি পেছন ঘুরে সাপটাকে দেখেই ভয় পেয়ে লম্বা দুটো লাফ দিল। মূহুর্তের জন্য হাতের মুঠোটাও আলগা হয়ে গেল। সেই সুযোগে বাচ্চা টুনটুনিটা ফুড়ুত্‍ করে উড়ে গেল ওর মায়ের কাছে। তারপর বাগান পেরিয়ে মিলিয়ে গেল দূর আকাশে।
       টুনির বুকটা যেন মুহূর্তের মধ্যে হালকা হয়ে গেল। পরক্ষণে হেসে উঠল খিলখিল করে।

সমাপ্ত

  প্রভাত সরকার


Popular Books


Comments

Write a Comment