Image-Description
Stories
কেমন স্বপ্ন
Sep 29 2023 Posted by : দেবৈষিকা সাহা


রাতে ঘুম হচ্ছিল না আমার। ছাদের একটা কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারাগুলোর মধ্যে একটা তারা দেখি, দপদপ করতে করতে ক্রমশ বড় হচ্ছে। ওটা যে আমার কাছেই আসছে। তারপর দেখি, ওরে বাবা, ওটা যে একটা ইউএফও (UFO), টিভিতে দেখেছিলাম।

দরজাটা খুলে গেল। ভিতরে ছিল একটা ছোট্ট এলিয়েন। সবচেয়ে বেশি অবাক লাগল যে ও বাংলায় কথা বলে! এলিয়ন বলল যে, ওর নাম ডটি। গায়ে অজস্র ছোপ আছে তো, সেই জন্য।

ডটি বললো "টুমি কি অমার গ্রহে যাবে?"
"কিন্তু...?"
“আমি টোমায় এখানে পৌঁছে দেব।”
"ঠিক আছে।" আমি বললাম৷

ছাদে পড়েছিল একটা ভাঙা ক্লিপ, উপরটা ধারালো। দরকারে কাজে আসবে ভেবে পকেটে নিয়ে নিলাম। তারপর দুজনে উঠে বসলাম ইউএফও তে। যাওয়ার পথে অনেক গ্রহ দেখলাম। আমাদের গন্তব্য ছিল গ্রহ ‘যুবা যুবা’।

পৌঁছে আমি আরও অবাক হলাম ! ডটি আমার বন্ধু সোহম, সোমা আর জিৎ-কেও এনেছে। কিন্তু একি? অনেক দড়ি উড়ে এসে আমাদের বেঁধে ফেলেছে। ডটি ওর সঙ্গীদের দেখে বলল, "আজ অমাদের মহাভোজ।" ডটি তো দেখছি একটা বিশ্বাসঘাতক!

আমি বললাম "জিৎ ওই দিকে সরার চেষ্টা কর, তাহলে দড়িটা কাটতে পারব।" 
"ঠিক আছে। হ্যাঁ, কাটতে পেরেছি।" ভাগ্যিস ক্লিপটা এনেছিলাম। সময় হয়েছে পালানোর।

“বাবা গো! বাঁচাও গো! মশা না চিল? কোন কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং গ্রহ রে!", সোমা বলল। সেরেছে, ডটি জানতে পেরেছে। ও সেনা নিয়ে আসছে।
"পালা পালা", সোহম চেঁচাল।
আমরা দৌড়ে দৌড়ে একটা ফুলের বাগানে পৌঁছলাম।

"আর কোনোদিন ফুল তুলব না। ওফ, কী জোরে কামড়ায়!", আমি বললাম। তবুও বেশ রোমাঞ্চকর যাত্রা। হাঁটতে হাঁটতে ফুলের বাগান পেরিয়ে গেলাম। সামনে একটা বন দেখা যাচ্ছে। খুব একটা গভীর নয়।

সোমা বললো, "চল,গাছে উঠে যাই। "
"হ্যাঁ, চল।"
এতক্ষণে ডটি পৌঁছলো। ওকে দেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। রাত হয়েছে। ডটিরা ওখানেই শুয়ে পড়ল।

"এই সুযোগ, চল, পালাই", আমি বললাম।

গাছ থেকে নেমে এক ছুটে পেরিয়ে গেলাম জঙ্গল।
"ওফ বাবা, কোনোরকমে বেঁচেছি”, জিৎ বলল।

আলো ফুটেছে। একটা শুষ্ক আগ্নেয়গিরির কাছে পৌঁছে দেখি ওটার উপর দিকে একটা দরজা। পাহাড়টা চড়ে দরজা খুলে ঢুকলাম।

"এই এই বাঁচাও, আমরা পড়ে যাচ্ছি!", সোহম ঘাবড়ে গিয়ে বলল।

"চুপ কর!" এ কী ফুলের মধ্যে পড়েছি। পাশে আগুন জ্বলছে। ওরে বাবা! একটা পিঁপড়ে আগুনের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে বেরিয়ে এল। তারপর দুঃখ শুরু...আরো এলিয়েন। কিন্তু ওরা বলল যে, ওরাও মানুষ ছিল। আগুনের কারণে এলিয়েন হয়ে গেছে। ওটা ওদের বাড়ি।

"আমরা পৃথিবীতে ফিরতে চাই", আমরা বললাম। কিন্তু ওদের রোজ ডটির ভয়ে পালাতে হয়। এই ব্যাপারে আমরা একজোট হলাম । কিন্তু শর্ত ছিল যে আমরা ওদের সাহায্য করলে, ওরাও আমাদের সাহায্য করবে। জানতে পেলাম ইউএফও  ছিল পাশের পাহাড়ে। এই ভালো এলিয়েনগুলোর আবার মানুষ হওয়ার উপায় ছিল ডটির কাছে। সেটা যেভাবেই হোক আমাদের জানতে হবে। আমরা জানলাম যে ডটি ও তার সেনাপতি ছাড়া ওষুধ উদ্ধার করার কোনো উপায় কেউ জানত না।

সোমা বলল, "বন্ধুরা, আমাদের দুই দল হয়ে দুজনের কাছে গিয়ে উপায়টা জানতেই হবে।" 
"হ্যাঁ, তাই চল।"

ডটিদের কাছে যাওয়ার কোনো উপায় ভেবে না পেয়ে আমরাও আগুনে ঢুকে এলিয়েন হয়ে গেলাম। মহলে গিয়ে এলিয়েনদের পরিচয় পত্র চুরি করলাম। আমি, জিৎ ও চারজন গেলাম সেনাপতি ডোগুর কাছে ও বাকিরা গেল ডটির কাছে।

সেনাপতিকে বললাম,"এ বাবা...ডোগু ওষুধ উদ্ধারের উপায় জানে না। ছিঃ ছিঃ...!"
“জানি না? এই দেখ ― রাজার গলার লকেট হচ্ছে চাবি ও রানীর ঘরের আলমারিতে আছে ওষুধ।"
"বলার জন্য ধন্যবাদ।"
“এই দাঁড়াও!” ডোগু চেঁচিয়ে বলল।
"টাটা, মিশন কমপ্লেটেড!", আমি বললাম।
সোমা-রাও এসে গেছে। “আমরা ডটির কাছে পৌঁছতে পারিনি।"

আমরা জেনে গেছি। রাত হয়েছে। সকলে কাজ শুরু করে দিলাম। আমি আমার হেয়ারপিন দিয়ে ডটির ঘরের তালা খুলে দিলাম ।

ঘুমন্ত এলিয়েনের গলার লকেট খুলে নিলাম। পাশের ঘরে রানী। ঘরে ছিল আলমারি। সেটা খুলে সিন্দুক বের করলাম। তালাটা খুলে ওষুধটা সবাই খেলাম। আবার মানুষ হয়ে গেলাম।

আস্তে আস্তে ভোর হয়েছে। আমরা ডটি ও তার সঙ্গীদের এনে মহলের পর্দা দিয়ে বানানো দড়ির সাহায্যে বেঁধে দিলাম। এইবার মহলের চারিদিকে গাছের মাঝে মাঝে দড়ি বেঁধে গুলতি বানালাম। গাছের নিচে রাখলাম পাথর। মহলের ঠিক সামনের গাছটার ডালের সাথে পশুদের ঘর থেকে আনা ছোট খাঁচা বাঁধলাম। আস্তে আস্তে সকাল হয়ে গেল। আমি আর সোমা পাথর ছুঁড়ে ডটিদের জাগালাম। ওরা থতমত খেয়ে মহলের দিকে ছুটতে লাগল। খাঁচার নীচে পৌঁছতেই সোহম ও জিৎ দড়ি ছেড়ে দিল। খাঁচাটা দুষ্টুগুলোকে দিল আটকে।

ওরা ফেঁসে গেল। সেনাপতি ডোগু ওদের বাঁচাল।

আমি বললাম, “সোমা চিন্তা নেই, ওরা এত সহজে পার পাবে না।”

'আমাদের নতুন বন্ধুরা পাথরের গুলি নিয়ে মহলে তৈরী আছে।' চুপি চুপি গিয়ে দেখি, ঠিক তাই। ডটিরা পা পিছলে পড়েছে।
জিৎ চেঁচাল, "ওদের বেঁধে ফেল।" দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলাম ওদের।

ডটি বলল, "বিরক্ত কেন করছ?“
"তোমরাই বা বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেন?” আমরা বললাম।
"আমাদের ক্ষমা করো।"
"ঠিক আছে কথা দাও৷"
"আমিই টোমাদের পৌঁছে দেব।“ ডটি বলল।

আমরা ইউএফও-তে উঠলাম। বাড়ি পৌঁছে দেখি মা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখেই চেঁচাল, "কটা বাজে জানিস?”
ধপ ধপ, একি, দশটা বাজে! তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম! সত্যি হলেও ভালো হত।

দেবৈষিকা সাহা


Popular Books


Comments

  • chMsgpHbtvBTCSQ

    QtKCdaXok

    Feb 7 2024
  • chMsgpHbtvBTCSQ

    QtKCdaXok

    Feb 7 2024
  • chMsgpHbtvBTCSQ

    QtKCdaXok

    Feb 7 2024

Write a Comment